ভোগান্তি: ভাঙড়ের সাতুলিয়ায় ছবিটি তুলেছেন সামসুল হুদা
দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা। রাস্তাঘাটে জলে থই থই করছে। এরই সুযোগ নিয়ে দর হাঁকছে অটো, টোটো, রিকশা।
জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘যে ভাবে দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিকে বলেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে জল পাম্প করে বের করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি প্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, ক্যানিং, বারুইপুর, সোনারপুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ রাস্তাঘাট জলের তলায়। কোথাও এক হাঁটু জল তো কোথাও কোমর সমান। সোনারপুর মোড় থেকে কামালগাজি যাওয়ার রাস্তা জলের তলায় ডুবে গিয়েছে। ভাঙড়ের কলেজ রোড, কাঁঠালিয়ার ৯১ বাস স্ট্যান্ড এলাকা, সাতুলিয়া, সোনারপুরের বোসপুকুর কলোনি, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভা এলাকার মিশনপল্লি, শিমুলতলা, রাধাগোবিন্দপল্লি, বজবজ মহেশতলা, পূজালি পুরসভা এলাকা, নরেন্দ্রপুর স্টেশন রোড, ক্যানিং স্টেশনের রাস্তা-সহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট জলের তলায়।
ভাঙড়ের বাসিন্দা রফিকুল হক বলেন, ‘‘ঘটকপুকুর থেকে ভাঙড়ের রিকশা ভাড়া ৬ টাকা। এই বৃষ্টিতে সেই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৫-২০ টাকা। অতীতে বর্ষাকালে ভাঙড়ে রাস্তায় জল জমতে দেখিনি। এ বার কলেজ রোড থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় জল জমে গিয়েছে।’’ স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, বর্ষার আগে নিকাশিনালা সংস্কার করলে এমন পরিস্থিতি হত না। দীর্ঘ দিন ধরে নিকাশি নালাগুলি সংস্কার না করার ফলে নালার মুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কারণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে অধিকাংশ এলাকা। স্থানীয় মানুষের আরও অভিযোগ, যে সব রাস্তাগুলিতে সাধারণত জল জমত না, নিকাশি ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় সেই সব রাস্তাও জলের তলায়।
রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লবকান্তি দাস বলেন, ‘‘পুরকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছেন। জল নামাতে ১১টি পাম্পের সাহায্যে নিকাশির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মূলত খালের নাব্যতা কমে যাওয়ায় জল বেরোতে পারছে না। যে কারণে সমস্যা হচ্ছে। দুর্যোগের কারণে পুরসভার কর্মীদের ছুটি বাতিল সমস্যা সমাধানের জন্য পুরসভার অফিস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়েছে। জরুরি সব ব্যবস্থাই চালু রাখা হয়েছে।’’
বর্ষার কারণে এ দিন ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার কম থাকায় অধিকাংশ স্কুলে প্রার্থনা সঙ্গীতের পরে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। জিএস প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সমস্যায় পড়েন পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক দেবাশিস নাথ বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে স্কুল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এমন চলতে থাকলে সোমবার স্কুলের পরীক্ষা ভেস্তে যাবে।’’ ভাঙড়ের পোলেরহাট হাইস্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘স্কুলে বিভিন্ন ক্লাসে ৪-৫ জন করে ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিল। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে তারা স্কুলে এসেছে। যে কারণে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।’’ চিকিৎসক মীরা চৌধুরী বলেন, ‘‘নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে নর্দমার জল রাস্তায় উঠে এসেছে তাতে জলবাহিত রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। জমা জল থেকে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মশা হবে।’’
ক্যানিংয়ের মাতলা ১ পঞ্চায়েতের নোনাঘেরি, সঞ্জয়পল্লি গ্রামের পাশাপাশি, দিঘিরপাড় পঞ্চায়েত ও মাতলা ২ পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে। জল জমেছে ক্যানিং রেলমাঠ এলাকাতেও। ক্যানিং ১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। বৃষ্টির ফলে দুর্যোগ হলে তা মোকাবিলার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে। স্থানীয় মানুষদের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে নিকাশিনালা পরিষ্কার না হওয়ার কারণেই টানা বৃষ্টিতে জল জমেছে এলাকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy