Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

বেড়ি পাঁচপোতা পর্যটন মানচিত্রে স্থান পাক, দাবি

জনশ্রুতি, আগে এখানে বন্দর বা পোতাশ্রয় ছিল। রাজা প্রতাপাদিত্য এখানে ইছামতী নদী ধরে এখানে এসেছিলেন।

বেড়ির বাওর।

বেড়ির বাওর।

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৭
Share: Save:

দিগন্ত বিস্তৃত চপল জলরাশি। পড়ন্ত বিকেলে লাল সূর্যটা ক্রমেই যেন ওই জলের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে নিচ্ছে। উপর দিয়ে দল বেঁধে ঘরে ফিরছে চেনা অচেনা পাখির দল। কাঁটাতারের সীমানা ছাড়িয়ে অনেকে চলে যাচ্ছে ওপার বাংলায়। পূর্ণিমায় চাঁদ নেমে আসে জলের গভীরে। নৌকার বৈঠার আঘাতে চাঁদের শরীরও যেন এলোমেলো হয়ে যায়।

এলাকাটি গাইঘাটার ভারত-বাংলাদেশ-লাগোয়া বেড়ি পাঁচপোতা। যত দূর চোখ যায়, শুধুই সবুজের সমারোহ। পলকেই চোখে জুড়িয়ে যায়। ওই এলাকায় রয়েছে অশ্বখুরাকৃতি একটি হ্রদ, লোকে ডাকে ‘বাওর’। প্রবীণ বাসিন্দারা জানালেন, অতীতে বাওরটি ইছামতীর অংশ ছিল। পরে নদী দিক পরিবর্তন করেছে। কিন্তু বাওরটি আজও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।

জনশ্রুতি, আগে এখানে বন্দর বা পোতাশ্রয় ছিল। রাজা প্রতাপাদিত্য এখানে ইছামতী নদী ধরে এখানে এসেছিলেন। বেড়ি বাওর ছাড়াও সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ডুমোর বাওর, বলদেঘাটা বাওর, ঝাউডাঙা বাওর আর ইছামতী নদী। নদীর ওপারে বাংলাদেশ। এ পারে দাঁড়িয়ে দূর থেকে ও দেশের গাছ-গাছালি বাড়ি ঘর, হলুদে ভরা সর্ষে খেত দেখা যায়। রয়েছে প্রাচীন কালী মন্দিরও।

ডুমোর বাওর।

ওই বাওরটিকে এ বার পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়ার দাবি তুললেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ বলেন, ‘‘বেড়ি পাঁচপোতা দেশের ভ্রমণ মানচিত্রে স্থান পাক, এমনটাই চান এলাকাবাসী। সল্টলেকের ইকো পার্কের ধাঁচে সাজিয়ে তোলা হোক পাঁচপোতার বেড়ির বাওরকে। আশেপাশের তেঁতুলবেড়িয়া, গড়জেলা, কালাঞ্চি, বাউডাঙা, বলদেঘাটা এলাকা নিয়ে সুন্দরবন বা দার্জিলিংয়ের মতো তৈরি করা হোক ইকো টুরিজম।’’ এলাকাবাসীর দাবি, কলকাতার কাছে এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির সময় কাটানোর নতুন গন্তব্য হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।

বছরভর, বিশেষ করে শীতের মরসুমে বেড়ি পাঁচপোতা বাওর ও ডুমোর বাওরের আকর্ষণে বহু মানুষ এখানে আসেন। বাওরের পাড়ে বনভোজন হয়। উপরি পাওনা, বাওরে নৌকো বিহার। তবে এখানে আসতে হলে নিজের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখা জরুরি। কারণ, সব সময়েই বিএসএফ জওয়ানদের নজরদারি থাকে।

কথা হচ্ছিল, প্রবীণ ধীরেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে। ছোটবেলায় বাংলাদেশের বরিশাল থেকে পাঁচপোতায় এসেছিলেন। স্মৃতি এখনও টাটকা। তাঁর কথায়, ‘‘তখন বেড়ি খালের মাধ্যমে বাওরের সঙ্গে ইছামতীর যোগাযোগ ছিল। বাওরে প্রচুর কচুরিপানা ছিল। নদীর নোনা জল ঢুকে কচুরিপানা মরে যায়। জাল ফেলে রুই কাতলা, মৃগেল, খোলসে, পুঁটি— কত মাছ ধরেছি।’’

বনগাঁ শহর থেকে বাসে বা গোবরডাঙা স্টেশনে নেমে মাত্র ১১ কিলোমিটার পথ বাস, অটো, ট্রেকার বা অন্য যানবাহন করে সহজেই পৌঁছনো যায়, পাঁচপোতা বাজারে।

এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ব্লক প্রশাসনের তরফে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘আমরাও চাই এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কাছে-পিঠে আর নেই। ফের রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে।’’

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

অন্য বিষয়গুলি:

Panchpota beri Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy