প্রতীকী ছবি।
এক ভোট গিয়ে আসতে চলেছে আর এক দফা পঞ্চায়েত ভোট। মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় পাঁচটি বছর। কিন্তু নানা জটিলতায় এখনও বোর্ড গঠন হল না আমডাঙার দু’টি পঞ্চায়েতে। এর ফলে উন্নয়নের বহু কাজ অধরাই থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ অনেকের।
গত পঞ্চায়েত ভোটে তারাবেড়িয়া ও বোদাই পঞ্চায়েতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দল। বোর্ড গঠন করা যায়নি। প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। মরিচাতেও প্রাথমিক ভাবে এই অচলাবস্থা থাকলেও পরে বিজেপির এক সদস্য তৃণমূলে যোগদান করায় বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল।
গত পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন-পর্বে, ভোটের দিন আমডাঙায় খুন হন দুই সিপিএম কর্মী। বোর্ড গঠনের আগের রাতে ফের রক্তাক্ত হয় বইচগাছি গ্রাম। রাজনৈতিক সংঘর্ষে খুন হন সিপিএমের এক জন এবং তৃণমূলের তিন কর্মী। সংঘর্ষের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের মরিচা ও বোদাই পঞ্চায়েত এলাকাতেও। তিনটি পঞ্চায়েতেই স্থগিত হয়ে যায় বোর্ড গঠন।
তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের মধ্যে গত ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৯টি আসন। সিপিএম ৭টি এবং বিজেপি, কংগ্রেস ও নির্দল পেয়েছিল একটি করে আসন। বোর্ড গঠন করতে দরকার ছিল ১০ জনের সমর্থন।
সিপিএম সূত্রের খবর, তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপি, কংগ্রেস, নির্দল সদস্যেরা সিপিএমকে সমর্থন করে বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। তারই জেরে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গ্রামের বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘বোর্ড গঠনের আগের সন্ধ্যায় বোমার শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। বইচগাছি মোড়ে দু’পক্ষের বোমাবাজি চলে ঘণ্টাখানেক। রাতের অন্ধকারে বহু মানুষ ভয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন। আমিও সপরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলাম।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলার কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে-পরে এত গোলমাল হয়েছিল, বিধানসভাতেও ভোট দিতে যাইনি আমরা অনেকে।’’ এলাকার এক যুবক জানালেন, ২০১৮ সালের ২৮ অগস্ট সন্ধ্যায় তির-ধনুক, গুলি-বোমা নিয়ে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষ বাধে। প্রচুর বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বোমা পড়ে। চার-পাঁচ ঘণ্টা পুলিশও ঢুকতে পারেনি।’’ ওই যুবকের কথায়, ‘‘থানায় ফোন করে সে দিন বুঝেছিলাম, পুলিশও আমাদের মতো অসহায়। তাদেরও হাত-পা বাঁধা ছিল। ফলে দুষ্কৃতীরা অবাধে গোলমাল চালিয়ে যায়। এখানে সিপিএম-তৃণমূল সব সমান।’’
এখনও গ্রামের লোক ভয়ে ভয়ে থাকেন। যে কোনও সময়ে গোলমাল ছড়ানোর আশঙ্কায় ভোগেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে কথা বলতে, ছবি তুলতেও ভয় অনেকের। ফের ভোট আসছে। আবার রক্তাক্ত হবে এলাকা— এমন আশঙ্কা অনেকেরই।
তারাবেড়িয়ায় অশান্তির আঁচ পড়ে পাশের বোদাই পঞ্চায়েতেও। ১৫ আসনের এই পঞ্চায়েতে ৮টি আসন একক ভাবে পায়নি কেউ। ফলে বোর্ড গঠনে সমস্যা হয়। সিপিএম, তৃণমূল ৫টি করে আসনে জেতে। বিজেপি ২টি এবং নির্দল জিতেছিল ৩টি আসনে।
মরিচাতেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কেউ। তবে বিজেপির এক জয়ী সদস্য তৃণমূলে যোগদান করায় পরে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। তবে তারাবেড়িয়া ও বোদাইয়ে এমন কিছু ঘটেনি। বিষয়টি গড়ায় আদালতে।
বিজেপির ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি অরিন্দম দে বলেন, ‘‘মরিচা পঞ্চায়েতে বিজেপির এক জয়ী প্রার্থীকে দলে টেনে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। তারাবেড়িয়া ও বোদাই পঞ্চায়েতে ওদের এই কৌশল ব্যর্থ হয়েছে।’’ সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খানের কথায়, ‘‘অশান্তির পরে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করি, বোর্ড গঠন না করার জন্য। অশান্তির পরে আমাদের কয়েকজন জয়ী সদস্য গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তাঁরা তখন জেলে। বোর্ড গঠন ঘিরে ফের অশান্তি হতে পারে, এই যুক্তিতেই আদালত বোর্ড গঠনে সায় দেয়নি। বিষয়টি এখনও বিচারাধীন।’’
আমডাঙা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘বইচগাছি গ্রামে হিংসার পরে আমরা বোর্ড গঠন করতে চেয়েছিলাম। সিপিএম হাই কোর্টে গিয়ে বোর্ড গঠন আটকে দেয়। আদালতের রায় আজও হয়নি। দেখতে দেখতে সাড়ে চার বছর পার হল। কিছু দিন পরে ফের পঞ্চায়েত ভোট। এ ভাবেই চলছে।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, বোর্ড গঠন না হওয়ায় দুই পঞ্চায়েত এলাকায় উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। অভাব-অভিযোগ জানাতে কার কাছে যাবেন, সেটাই তাঁরা জানেন না। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য মনোজ মুলা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কাজ বন্ধ, গ্রামসংসদ সভা হয়নি, রাস্তায় আলোটুকুও বসেনি। পানীয় জলের কল সারাই হয় না। নতুন নালা হয়নি। পথঘাট ভাঙাচোরা।’’
বারাসতের মহকুমাশাসক সোমা সাউ বলেন, ‘‘আদালতের রায়ে দু’টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত আছে। বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েত পরিচালনা করছেন। বরাদ্দ অনুযায়ী উন্নয়ন হয়েছে। বাসিন্দারা বিডিওর কাছে আলো এবং পানীয় জলের কল সংস্কারের লিখিত আবেদন করলে শীঘ্রই সমাধান করা হবে। রাস্তা, নর্দমা তৈরি ইত্যাদি পঞ্চায়েতের অল্প বাজেটে করা সম্ভব নয়। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy