Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Panchayat Election

ভোট আসছে, আতঙ্কে বাসন্তীর মানুষ

বাসন্তীতে রাজনৈতিক লড়াই নতুন নয়। বাম আমলেও এখানে বার বার গোলমাল বেধেছে। একসময় এই বিধানসভায় ক্ষমতায় ছিল বাম শরিক আরএসপি।

অশান্ত: কয়েক আগে বাসন্তীর ভরতগড়ে রাজনৈতিক খুনের পর এলাকায় পুলিশ। ফাইল চিত্র

অশান্ত: কয়েক আগে বাসন্তীর ভরতগড়ে রাজনৈতিক খুনের পর এলাকায় পুলিশ। ফাইল চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
বাসন্তী শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৫৮
Share: Save:

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকা দখলের লড়াইয়ে বার বার উত্তপ্ত হয়েছিল বাসন্তীর কাঁঠালবেড়িয়া, ফুলমালঞ্চ, আমঝাড়া, চরাবিদ্যা-সহ আশপাশের এলাকা। ভোটের পরেও বিভিন্ন সময় রাজনীতির লড়াইয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে এই সব এলাকায়। সামনে আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন। কী হবে ভেবে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

বাসন্তীতে রাজনৈতিক লড়াই নতুন নয়। বাম আমলেও এখানে বার বার গোলমাল বেধেছে। একসময় এই বিধানসভায় ক্ষমতায় ছিল বাম শরিক আরএসপি। কিন্তু এলাকায় আরএসপি ও সিপিএমের ঝামেলা লেগেই থাকত। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দু’দলের বিবাদে ভোটের দিনই মৃত্যু হয়েছিল তিন আরএসপি কর্মীর।

২০১৬ সালে বিধানসভায় এই এলাকায় জয়ী হয় তৃণমূল। ধীরে ধীরে পঞ্চায়েত-সহ সর্বত্রই তৃণমূলের প্রভাব বাড়ে। সেই সঙ্গে অশান্তি বাড়ে তৃণমূলের অন্দরে। দুই বাম শরিক সিপিএম-আরএসপির ঝামেলার বদলে শুরু হয় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ। সেই বিধানসভা ভোটের পর থেকেই কার্যত বাসন্তীতে তৃণমূল দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে শুরু হয় কোন্দল। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই বিবাদ চরমে উঠেছিল। বেশিরভাগ পঞ্চায়েত এলাকাতেই দলের টিকিট না পেয়ে যুব তৃণমূল কর্মীরা নির্দল প্রার্থী দিয়ে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন।

ভোট ও ভোট পরবর্তী সময়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বহুবার। অন্তত দশজনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও সামান্য বিষয় নিয়েও তৃণমূলের যুব সংগঠন ও মূল সংগঠনের মধ্যে মাঝে মধ্যেই বিবাদ, সংঘর্ষ বেধে যায়। অভিযোগ, বোমা-বন্দুক মজুত রেখেছে দু’পক্ষই।

গত কয়েকমাসে লাগাতার বাসন্তী থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হলে এলাকায় যে অশান্তি বাড়বে, তার আঁচ এখন থেকেই পাচ্ছেন এলাকার মানুষ।

অবশ্য স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মতে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোনওপক্ষই নতুন করে অশান্তি করে দলের উচ্চ নেতৃত্বের বিরাগভাজন হতে চায় না। সেই কারণেই ছাই চাপা রয়েছে আগুন। তবে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে যে কোনও দিনই।

বাসন্তী ব্লক তৃণমূলের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান গাজি বলেন, “আমরা তৃণমূল কর্মীরা সকলেই চাই এলাকায় শান্তি ফিরুক। দলের নির্দেশ মেনে আমরা এলাকায় দলীয় সংগঠন বৃদ্ধির কাজ করছি। আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। কিছু বিজেপি, আইএসএফ ও সিপিএমের লোকজন এলাকায় তৃণমূলের শাখা সংগঠনের নাম করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। তখনই অশান্তি হচ্ছে।”

এলাকার বিজেপি নেতা বিকাশ সর্দার বলেন, “তৃণমূল নিজেদের কোন্দল ঢাকতে বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। বাসন্তীতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের লড়াই সকলেরই জানা।”

বাসন্তীর প্রাক্তন বিধায়ক তথা আরএসপি নেতা সুভাষ নস্কর বলেন, “নিজেদের মধ্যেই পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখলের লড়াই তৃণমূলের। আর এই লড়াইয়ের জন্য বার বার বাসন্তী রক্তাক্ত হয়েছে। গত কয়েক বছরে যাঁরা খুন হয়েছেন, যারা খুন করেছে, যাদের বাড়ি থেকে বোমা-বন্দুক উদ্ধার হয়েছে, সকলেরই পরিচয় তৃণমূল কর্মী। এখন নিজেদের পিঠ বাঁচাতে বিরোধীদের নামে দোষ দিচ্ছেন।”

শাসক-বিরোধী যাই বলুক না কেন, বাসন্তীর সাধারণ মানুষ শান্তি চান। স্থানীয় বাসিন্দা নুরসেলিম পিয়াদা, রবিন মণ্ডল, মেহেরুন্নেসা বিবিরা বলেন, “আমরা চাই বাসন্তীতে শান্তি ফিরুক। রাজনৈতিক রেষারেষিতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”

বাসন্তীর বর্তমান বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “আমি বার বারই বলেছি বোমা-বন্দুক ছেড়ে দিন। শান্তিতে এলাকায় বসবাস করুন। পুলিশকেও বলেছি, এলাকায় কড়া নজরদারি করতে। এলাকায় কোনও সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat Election basanti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy