Advertisement
E-Paper

ওই লোকটি প্রতারক, আমার সম্মানহানি করেছে: দেবশ্রী রায়

গত ৩ ডিসেম্বর নৈহাটি থানায় সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন এক ব্যক্তি।

দেবশ্রী রায় ও ধৃত সুমন বসু।— নিজস্ব চিত্র

দেবশ্রী রায় ও ধৃত সুমন বসু।— নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল 

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪৮
Share
Save

জালিয়াতি এবং প্রতারণার অভিযোগে নৈহাটি থানার পুলিশ রবিবার রাতে সুমন বসু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। নৈহাটি, টালিগঞ্জ-সহ একাধিক থানার তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগটি হল, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে ই-রিকশা দেওয়ার নাম করে ৮০ লক্ষ টাকা তোলা।

পুলিশ জানিয়েছে, সুমনের বাড়ি বীজপুর থানার কোনা মোড়ে। তার কাছ থেকে দু’টি গাড়ি, ২৫টি মোবাইল ফোন, ৬টি ওয়াকিটকি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার একটি গাড়িতে ‘প্রেস’ এবং অন্য গাড়িটিতে ‘অ্যাডভোকেট’ স্টিকার সাঁটা রয়েছে। ওই ব্যক্তি নিজেকে তৃণমূলের রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের ঘনিষ্ঠ বলেও দাবি করেছে। যদিও গত নভেম্বরে দেবশ্রীও টালিগঞ্জ থানায় সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণারই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে দেবশ্রী বলেন, ‘‘ওই লোকটি প্রতারক। আমার সম্মানহানি করেছে। ওর কোনও কথাই বিশ্বাসযোগ্য নয়। নাম ভাঁড়িয়ে আমার সংস্থায় টাকা দান করবে বলেছিল। ও কোনওকালে আমার ঘনিষ্ঠ ছিল না। ও আমার টাকাও আত্মসাৎ করেছে। সেটা বড় কথা নয়, ই-রিকশা দেওয়ার নামে গরিবের টাকা মেরে দিয়েছে। এখন আমার নাম বলে রেহাই পেতে চাইছে।’’

গত ৩ ডিসেম্বর নৈহাটি থানায় সুমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন এক ব্যক্তি। অভিযোগ, নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল সুমন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নৈহাটি থানার পুলিশ সুমনের খোঁজ চালাচ্ছিল। অবশেষে রবিবার রাতে সূত্র মারফত খবর আসে, বাড়িতে ফিরেছে সে। রাতেই পুলিশ গিয়ে তাকে পাকড়াও করে।

মাসকয়েক আগে একটি এনজিও-র নাম করে রায়দিঘিতে কয়েকশো যুবকের কাছ থেকে ই-রিকশা বিলি করার জন্য টাকা তুলেছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা উঠেছিল। তারপর থেকে আর তার পাত্তা পাওয়া যায়নি সুমনের। অভিযোগ, ই-রিকশা বিলির জন্য দেবশ্রীর নাম ব্যবহার করেছিল সুমন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেবশ্রী স্থানীয় কিছু মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। যদিও দেবশ্রীর দাবি, ওই ঘটনার বিন্দুবিসর্গ জানতেন না তিনি। ১৭ নভেম্বর টালিগঞ্জ থানায় সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কলকাতা পুলিশও তাকে খুঁজছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, নৈহাটি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি থানায় সুমনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। কোথাও তীর্থে নিয়ে যাওয়ার নাম করে টাকা তুলেছে। কোথাও প্রতিবন্ধীদের সরঞ্জাম দেওয়া হবে বলে টাকা তুলেছে। সম্প্রতি নদিয়ার কৃষ্ণনগরের এক চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রতারণা করে একটি গাড়ি নিয়েছিল।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, সুমনের নিজের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রয়েছে। দেবশ্রীর সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুমন পথ কুকুরদের নিয়ে কাজ করতে চেয়ে দেবশ্রীর দ্বারস্থ হয়। পুলিশের দাবি, সুমন দেবশ্রীর সংস্থাকে বলে, সে এই কাজের জন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে অর্থ জোগাড় করবে বলেছিল। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সম্প্রতি স্থানীয় বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছিল সুমন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমন এলাকার বিজেপি নেতাদের বলেছিল, সে দেবশ্রীকে বিজেপিতে নিয়ে আসবে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, দেবশ্রীকে সে-ই রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। তার সমস্ত বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তা।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সোমবার দেবশ্রী টেলিফোনে জানান, সুমন নিজের নাম বলেছিল পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সে দু’কোটি টাকা জোগাড় করে তাঁর সংস্থায় দেবে বলেছিল। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিমানবাহিনীর এক পদস্থ কর্তার নামও জড়িয়েছিল। দেবশ্রী বলেন, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকে কারও সঙ্গে এমন কাজ করিনি। ওই লোকটা আমার কাছ থেকে পর্যন্ত টাকা নিয়ে সরে পড়েছে। কোথাও আমার সঙ্গে যায়নি।’’

ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপিতে আমার বয়স তো মোটে সাত মাস। তার মধ্যে আমি আর কত লোককে চিনব? ও নামে আমি কাউকে চিনি না। আমার বরং সন্দেহ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ এই ধরনের প্রতারকদের ব্যবহার করে বিজেপির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার চেষ্টা করবে।’’

E Rickshaw Debashree Roy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}