অপেক্ষা: ফের রোগীরা পরিষেবা পাবেন, আশা হাসপাতাল ঘিরে। নিজস্ব চিত্র।
সামনেই পুরসভার ভোট। তার আগে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু করতে পদক্ষেপ করল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ। বিরোধী দলগুলির অবশ্য বক্তব্য, এটি নির্বাচনী চমক ছাড়া কিছু নয়।
বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদ ভবনে গোবরডাঙার হাসপাতাল নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি বীণা মণ্ডল, জেলা পরিষদের কো-মেন্টর মনোজ রায়, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্করপ্রসাদ পাল, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী এবং পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী।
জ্যোতি বলেন, ‘‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জেলা পরিষদ পরিচালিত গোবরডাঙা হাসপাতালটি পুর দফতরকে হস্তান্তর করা হবে। যত দিন পুর দফতর হাসপাতালটি পরিচালনার ভার না নিচ্ছে, তত দিন জেলাপরিষদ হাসপাতালে আগের মতো ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু করবে।’’ জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। দিনরাত চিকিৎসা পরিষেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। থাকছে জরুরি বিভাগ। রোগী ভর্তি ও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে করা হবে। নারায়ণ বলেন, ‘‘হাসপাতালের বর্তমান পরিকাঠামো দেখতে ২৪ ফেব্রুয়ারি গোবরডাঙায় যাচ্ছি সকলে। তারপরেই দ্রুত সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’’
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে হাসপাতালের রোগী ভর্তির ব্যবস্থা বা ইনডোর বিভাগ। ধীরে ধীরে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়ে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে। এখন একমাত্র চিকিৎসক সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন কয়েক ঘণ্টা আউটডোরে রোগী দেখেন। সরকারি ছুটির দিন তাঁকে পাওয়া যায় না। অতীতে হাসপাতালে ৩০টি শয্যা ছিল। সর্বক্ষণ চিকিৎসক-নার্স থাকতেন। অপারেশন থিয়েটার ছিল। যন্ত্রপাতি ছিল। ছোটখাটো অস্ত্রোপচার হত। প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবও হত। হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের থাকার জন্য কোয়ার্টার ছিল। এক্স রে, প্যাথোলজি, নেবুলাইজার-সহ নানা পরিষেবা পাওয়া যেত। পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল। হাসপাতালে আলাদা হোমিওপ্যাথি বিভাগ ছিল।
হাসপাতালটি পুর্ণাঙ্গ রূপে চালুর দাবিতে এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে পৌর উন্নয়ন পরিষদের কর্মকর্তারা ২০১৪ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন করে আসছেন। জেলা পরিষদ ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে বার কয়েক। অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। নিয়মিত সভা-মিছিল করা হয়।
২০১৭ সালের মে মাসে ব্যারাকপুরের প্রশাসনিক সভায় পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বেহাল হাসপাতালের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। পুরপ্রধানের প্রশ্ন ছিল, হাসপাতাল নিয়ে তিনি এলাকার মানুষকে কী জানাবেন? মুখ্যমন্ত্রী সে দিন সাফ জানিয়ে দেন, ‘বলে দেবেন হাসপাতাল হবে না।’
মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রতিক্রিয়া নিয়ে চারিদিকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেন গোবরডাঙার বহু মানুষ। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরাও দলীয় পতাকা ছাড়া সামিল হয়েছিলেন তাতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদে সরব হন অনেকে। গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ ও হাসপাতাল বাঁচাও কমিটির ডাকে এলাকায় বন্ধ পালন হয়।
বন্ধ সফল হওয়ার পরেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে সুভাষকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান। পরবর্তী সময়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে সুভাষ তাঁর সঙ্গে দেখা করলে বরফ গলে। ফের পুরপ্রধান হিসাবে শপথ নেনে সুভাষ। সিপিএমের তরফে অরাজনৈতিক ভাবে নাগরিক কনভেনশন করা হয়।
লোকসভা ভোটে গোবরডাঙায় এ বার শাসক দলের ভরাডুবি হয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এর পিছনে আছে হাসপাতাল নিয়ে মানুষের ক্ষোভ। বিজেপির তরফে সম্প্রতি হাসপাতাল চালুর দাবিতে সাত দিনের অনশন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত নিয়ে পৌর উন্নয়ন পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা চাই, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালটির দায়িত্ব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু করুক। আর কোনও বিকল্প নেই। গোঁজামিল দিয়ে হাসপাতাল চালু হলে মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।’’ বিজেপির গোবরডাঙা শহর পৌর মণ্ডলের সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত দিন মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। রাস্তায় মানুষ মারা গিয়েছেন। এখন ভোটের স্বার্থে হাসপাতাল চালুর গল্প ফাঁদা হচ্ছে।’’ গোবরডাঙার প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুর দফতর বা জেলা পরিষদ হাসপাতাল এত দিন কেন চালু করল না? ভোটের আগে লোক দেখানো কাজ হচ্ছে। আগে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা ছিল, অস্ত্রোপচার হত। সে সব কেন চালু হবে না?’’ গোবরডাঙা শহর তৃণমূল সভাপতি শঙ্কর দত্তের কথায়, ‘‘ভোটের সঙ্গে হাসপাতাল চালুর কোনও সম্পর্ক নেই। দীর্ঘ দিন ধরে আমরা চেষ্টা করছি। এখন পুর দফতর পুরসভার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ রূপে হাসপাতালটি চালু করবে।’’
তবে শহরবাসী চাইছেন, জোড়াতালি নয়, সত্যি সত্যিই দিনরাতের সব পরিষেবা আগের মতো চালু হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy