স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে পরিষেবার অপেক্ষায় বসে আছেন রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোক। নিজস্ব চিত্র
জ্বরের সমস্যা নিয়ে কয়েকদিন আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন অনিমেষ মণ্ডল। বহির্বিভাগে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। একজন নার্স করোনার বুস্টার ডোজ় দিচ্ছিলেন। তিনিই হাতের কাজ থামিয়ে অনিমেষকে ওষুধ লিখে দেন। তবে ফার্মাসিস্ট না থাকায় ওষুধ না পেয়ে ফিরে যান ওই ব্যক্তি।
ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসক, নার্স বা ফার্মাসিস্ট নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতাল থেকে একজন নার্সকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আছেন তিনজন গ্রুপ-ডি কর্মী। এই পরিস্থিতিতে অনিমেষের মতো বহু রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা বা ওষুধ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
বাম আমলে তৈরি এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক সময়ে একজন চিকিৎসক নিয়মিত আসতেন। এ ছাড়া ছিলেন ২ জন নার্স, একজন ফার্মাসিস্ট। সে সময়ে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ জন রোগী আসতেন। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভরশীল জয়পুর, পানাপুকুর, গানিরাইট, নিমকুড়িয়া, বিজয়গঞ্জ বাজার, কাঁঠালিয়া-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ৩৫-৪০ হাজার মানুষ।
কিন্তু এখন বহির্বিভাগ চালু থাকলেও, জরুরি বিভাগ নেই। ব্যবস্থা নেই রোগী ভর্তিরও। বুধ ও শনিবার নন কমিউনিকেবল ডিজ়িসেস বা এনসিডি (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি) ক্লিনিক চালু থাকে। সেখানে একজন চিকিৎসকের দু’দিন আসার কথা। কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসক নিয়মিত আসেন না।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ২ ব্লকের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালের অধীনে টোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি টোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অনেক পুরনো হলেও এর কোনও উন্নতি হয়নি। এমনকী, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ঠিকমতো সংস্কারও হয় না। কেন্দ্রের আনাচ-কানাচে আগাছা জন্মেছে। পাঁচিল না থাকায় গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দা শম্ভু বিশ্বাস, আকলিমা বিবিরা জানালেন, আগে যখন নিয়মিত চিকিৎসক আসতেন, তখন বহির্বিভাগে রোগী দেখা, ওষুধ দেওয়া— সবই হত। এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ধুঁকছে। রাতে কোনও সমস্যা হলে বা প্রসূতিদের জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালই একমাত্র ভরসাস্থল। কিন্তু সেই হাসপাতালের দূরত্ব ১০-১২ কিলোমিটার।
এ বিষয়ে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, “আমি ভাঙড়ের ব্লক হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা শুনেছি। অবিলম্বে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করব। তারপরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভাঙড়ের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
ভাঙড় ২ ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জিরেনগাছা ব্লক হাসপাতালে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক আছেন। যেহেতু টোনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০টি শয্যা চালু আছে, তাই সেখানে একজন চিকিৎসক, চারজন নার্স ও একজন ফার্মাসিস্ট দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থায়ী ভাবে কেউই নেই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের তুলনায় ব্লক এলাকায় ৪ জন চিকিৎসক কম রয়েছেন।
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক হিরণ্ময় বসু বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে ভাঙড়ের মানুষকে সব রকম পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সমস্যার কথা আমরা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়েছি। আশা করি, দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy