চন্দন মণ্ডলের বাড়ি। বাগদার মামাভাগিনা গ্রামে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে বাগদার মামাভাগিনা গ্রামের বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তাঁর বাড়িতে নানা জায়গা থেকে বহু লোক আসছেন। বাড়ির দরজায় তালা ঝুলতে দেখে ফিরেও যাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তাঁদের প্রশ্ন, চন্দনের পরিবারের সদস্যদের কোথায় পাওয়া যাবে।
সে প্রশ্নের উত্তর নেই পাড়া-পড়শির কাছে। তাঁরা অনেকে পাল্টা জানতে চেয়েছেন, কেন খোঁজ করছেন চন্দনের বাড়ির লোকের? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। তবে গ্রামের অনেকের অনুমান, যাঁরা আসছেন খোঁজ নিতে, তাঁরা চন্দনকে টাকা দিয়েও চাকরি পাননি। টাকা ফেরতের আশাতেই এখন খোঁজ-খবর শুরু করেছেন। এঁরা এ বার পুলিশের কাছে গিয়ে মুখ খুলুন, চাইছেন গ্রামের অনেকে। তাতে তদন্তে সুবিধা হবে বলেও অনুমান করছেন সকলে। এক গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘অনেকেই ভাবছেন চন্দনকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি যদি পুলিশকে জানানো হয়, তা হলে তাঁরা উল্টে নানা জটিলতায় ফেঁসে যাবেন। টাকাও পাবেন না। সে কারণেই সম্ভবত সরাসরি মুখ খুলতে তাঁদের এ দ্বিধা।’’
এ দিকে, চন্দনকে টাকা দিয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন বলে জানাচ্ছেন, তাঁরাও আপাতত পর্দার আড়ালে। আতঙ্কে রয়েছেন, কখন চাকরি যায়!
চন্দনের এজেন্ট হিসাবে বাগদার অন্তত ছ’জনের নাম ঘুরছে মানুষের মুখে মুখে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছ’জনের ছবি ও নাম দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘এটা চন্দনের টিম।’ এজেন্টদের কেন গ্রেফতার করা হবে না, সে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চন্দন গ্রেফতার হওয়ার পরে এজেন্টরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এত দিন তাঁরা বলে বেড়াচ্ছিলেন, ‘‘দাদা (চন্দন) সব সেটিং করে ফেলেছে। দিল্লিতেও গিয়েছিল।’’ প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের ভিডিয়ো সামনে আসার পরেও চন্দন দীর্ঘ দিন গ্রেফতার হননি। ফলে এজেন্টদের সে সব দাবি অনেকে বিশ্বাস করতেও শুরু করেছিলেন। চন্দন ধরা পড়ার পরে অবশ্য এজেন্টদেরই আর দেখা মিলছে না এলাকায়।
বাসিন্দারা কেউ কেউ জানালেন, চন্দনের এজেন্টদের কেউ কেউ নিজেরাও স্কুলে চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও চাকরি হয়েছিল। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘চন্দনের এক এজেন্ট এলাকায় রীতিমতো ঝাঁ চকচকে অফিস খুলে বসেছিল টাকা তুলতে। ওই এজেন্ট পরবর্তী সময়ে ‘উপর মহলে’ সরাসরি যোগাযোগ বানিয়ে নেন। চন্দনকে ছাড়াই ‘কাজ’ করতে শুরু করেন।
বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক, বিজেপি নেতা দুলাল বর বলেন, ‘‘কেবল চন্দন নন, তাঁর গডফাদারকে গ্রেফতার করতে হবে, যিনি তাঁর কালীপুজো উদ্বোধন করতে এসেছিলেন। ২০১২ সাল থেকে বাগদায় যত ছেলেমেয়ের স্কুলে চাকরি হয়েছে, তার ৯৫ শতাংশ চাকরি চন্দনকে টাকা দিয়েই হয়েছে। যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পাননি, তাঁদের বলব, যাঁদের টাকা দিয়েছিলেন তাঁদের বাড়িতে চড়াও হন। কলার ধরে টাকা আদায় করুন।’’
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়ার কথায়, ‘‘এই চক্রে জড়িত আরও অনেকে। তাদেরও গ্রেফতার করতে হবে। বনগাঁতেও এক জন এ রকম চন্দন আছে। সে-ও টাকার বিনিময়ে স্কুলে চাকরি দিয়েছে। টাকার বিনিময়ে স্কুলে বদলি করিয়েছে। আমার প্রশ্ন, সিবিআই কেন তাকে ডাকছে না!’’
বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদারের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির ‘চাঁদের হাট’ খুলে বসেছিলেন চন্দন। তাঁর কথায়, ‘‘এত টাকা তো উনি একা হজম করেননি। চন্দনের এত সাহস নেই, এত বড় দুর্নীতি একা চালাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy