Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিশুকে আছাড় মেরে খুন, ধৃত

উত্তম শিশুটিকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিতে টানাটানি শুরু করে। মা-ঠাকুমা মিলে বাধা দিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। ধাক্কা দিয়ে তাঁদের ফেলে শিশুটিকে কেড়ে নেয় উত্তম। মা-ঠাকুমার চোখের সামনেই বাচ্চাটিকে মাটিতে পর পর দু’তিন বার আছাড় মারে।

শোকার্ত: দোলনা আগলে মা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

শোকার্ত: দোলনা আগলে মা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোপালনগর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৯
Share: Save:

মেয়েকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মা। পাশে শিশুর ঠাকুমা। পড়শি এক যুবক হঠাৎই সেখানে হাজির হয়ে চোখ পাকিয়ে হুজ্জুত শুরু করে। বারণ করলে ওই যুবক চড়-থাপ্পড় মারে বলেও অভিযোগ।

তখনকার মতো গোলমাল মিটে গিয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের সেখানে হাজির হয় উত্তম মুন্ডা নামে ওই যুবক। শর্মিলা নামে এগারো মাসের মেয়েকে নিয়ে তখন বাড়ির সামনে দাঁত মাজছেন মা অঞ্জনা। উত্তম শিশুটিকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিতে টানাটানি শুরু করে। মা-ঠাকুমা মিলে বাধা দিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। ধাক্কা দিয়ে তাঁদের ফেলে শিশুটিকে কেড়ে নেয় উত্তম। মা-ঠাকুমার চোখের সামনেই বাচ্চাটিকে মাটিতে পর পর দু’তিন বার আছাড় মারে।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার শুভরন্তপুর মুন্ডাপাড়ায়। জখম শর্মিলা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বমি শুরু হয় তার। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি শর্মিলাকে দ্রুত বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। পথেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে শিশুটি। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানিয়ে দেন।

ততক্ষণে উত্তম নিজের বাড়িতে লুকিয়ে বসেছিল। পা়ড়ার লোকজন তাকে ধরে মারধর করে বেঁধে রাখেন। পরে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। গ্রেফতার করা হয়েছে ওই যুবককে।

কিন্তু কেন এমন ঘটাল উত্তম, স্পষ্ট নয় প্রতিবেশীদের কাছে। অন্ধাকারে পুলিশও। এমনিতে ওই যুবক এলাকায় ‘ভাল ছেলে’ বলেই পরিচিত। মিস্ত্রির কাজ করে। সে কেন এমন কাণ্ড ঘটাবে, তা নিয়ে ধন্দে সকলেই। তবে পড়শিদের কেউ কেউ পুলিশকে জানিয়েছেন, উত্তম কয়েক দিন ধরে কিছুটা অসংলগ্ন আচরণ করছিল। লোকজনের দিকে চোখ পাকিয়ে তেড়ে যাচ্ছিল। তার কোনও মানসিক সমস্যা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। উত্তমের স্ত্রী পার্বতী বলেন, ‘‘ও তো বাচ্চাদের খুব ভালবাসে। এ দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেও নিজের মেয়েকে আদর করে গেল।’’

তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিক জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, রাগের মাথায় এমন ঘটিয়ে ফেলেছে সে। কিন্তু হঠাৎ রাগ হতে যাবে কেন, তার কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে অঞ্জনার বিয়ে হয় শুভরত্নপুরের সুজিত মুন্ডার সঙ্গে। শর্মিলা তাঁদের একমাত্র সন্তান। সুজিত হায়দরাবাদের মিস্ত্রির কাজ করেন। কিছু দিন পরেই বাড়ি ফেরার কথা তাঁর। শর্মিলার ঠাকুমা মিনালি বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেছিলাম নাতনিতে উত্তমের হাত থেকে বাঁচাতে। কিন্তু পারলাম না। চোখের সামনে আছাড় মেরে খুন করল।’’

ঘটনা সামলে উঠতে পারছেন না সদ্য সন্তানহারা মা। মেয়ের পুতুল, জামা জড়িয়ে কাঁদছেন। কখনও ফাঁকা দোলনায় দোল দিচ্ছেন। তা দেখে চোখের জল সামলাতে পারছেন না পড়শিরাও।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Child Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy