ভাঙা ঘরেই বাস। সাগরের গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
খাওয়া-দাওয়া কেমন হচ্ছে?
বৃহস্পতিবার বিকেলে নামখানার দেবনিবাস গ্রামের তিনতলা ভবনের ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সুশান্ত দাসের কাছে জানতে চাওয়া হল। গড়গড় করে বলতে শুরু করলেন, ‘‘খুব ভাল খাওয়া-দাওয়া। কোনও অসুবিধা নেই।’’ তাঁর সামনে-পিছনে তখন দাঁড়িয়ে শাসক দলের নেতারা।
ঘরের দাঁড়িয়েই এক নেতা দাবি করলেন, খাওয়া-দাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। পেট পুরে তিনবেলা সকলে খেতে পাচ্ছেন।’’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এমন উল্টো চিত্র দেখে মনে ধন্দ জাগে বইকী!
বুধবার সন্ধ্যায় ওই শিবির হাজির হয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর সামনে শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষ জন ক্ষোভ উগরে দেন। জানান, বুলবুলের পরে সকলে প্রাণ বাঁচাতে ঠাঁই নিয়েছেন শিবিরে। কিন্তু পাঁচ দিন ধরে ঠিক মতো খাবার মিলছে না। প্রায় অনাহারে আছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে এমনও নালিশ জানান কেউ কেউ। ওষুধের আকাল, এই অভিযোগও শুনতে হয় বাবুলকে।
তা হলে কোন ম্যাজিকে ভোল বদলে গেল শিবিরের?
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের দাবি, বাবুল ফেরার পরে শিবিরে শাসক দলের নেতারা আসেন। আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে শাসানো হয়েছে, ভয় দেখানো হয়েছে। সেই চাপেই এখন উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে মানুষের মুখে। বিজেপির স্থানীয় বুথ সভাপতি উত্তম মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ত্রাণ শিবিরে খাবার, পানীয় জল যথেষ্ট কম। আশ্রিতেরা সকলে খাবার পাবেন না কেন, এই প্রশ্ন তোলায় আমাকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।’’
অভিযোগ স্বভাবতই মানতে নারাজ এলাকার শাসক দলের পঞ্চায়েতের সদস্য সুশীল দাস। তাঁর দাবি, ‘‘এখানে খাবারের কোনও অভাব নেই। সকাল-দুপুর-রাতে দু’শো থেকে পাঁচশো জনের পাত পড়ছে।’’
তা হলে বাবুলকে কি মিথ্যা বললেন শিবিরে আশ্রিতেরা?
সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘কোথাও ত্রাণের খামতি নেই। প্রত্যেককে যথেষ্ট দেওয়া হয়েছে। বিজেপি সাংসদ যে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে অভিযোগ শুনেছিলেন, সেখানে আমি আজ দুপুরে গিয়েছিলাম। সব খোঁজখবর করে জেনেছি, মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। কোনও স্বজনপোষণ হচ্ছে না।’’
অভিযোগের শেষ নয় এখানে।
সাগরদ্বীপের ধবলাট শিবপুর গ্রামের দেবযানী চন্দদের মাটির দেওয়ালের কুঁড়ে ঘর মাটিতেই মিশে গিয়েছে বুলুবুলের দাপটে। জেরে পরিবারের ছ’জন মাথা গুঁজেছেন ৬ ফুট বাই ৬ ফুট রান্নাঘরে। দেবযানীর স্বামী দিনমজুর ভুবন চন্দ বলেন, ‘‘বুলবুলের দিন আমরা ত্রাণশিবিরে যাইনি। মনসা মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন প্রায় খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছি। সরকার থেকে পেয়েছি শুধু একটা ত্রিপল। খাবারের চাল-ডাল মেলেনি।’’
একই অভিযোগ অঞ্জলি মণ্ডল, দিপালী মণ্ডলদের। বললেন, ‘‘আমরা ব্লক অফিসের বাবুরা বলছেন, তোমরা বিজেপি। তোমাদের সাহায্য করব না।’’
সাগরের বিডিও সুদীপ মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা কোন রং না দেখেই সকলকে ত্রাণের সামগ্রী সরবরাহ করছি। তাতে চাল-ডাল-চিঁড়ে সহ অন্যান্য খাবার রয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুলবুলের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সাগর ব্লক এলাকায় ৫৩টি শিবির খোলা হয়েছিল। সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাজার দু’য়েক মহিলা-পুরুষ-শিশু। প্রত্যেককে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি আধিকারিকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy