তখনও অপেক্ষায় কানু দাসের স্ত্রী ও সন্তান। —নিজস্ব চিত্র
অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখলেন এফ বি নয়ন ট্রলারের মাঝি রবীন্দ্রনাথ দাস (কানু)। বাংলাদেশ থেকে বিমানে তাঁর ফেরার ব্যবস্থা করে ভারতীয় হাইকমিশন।
মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার উল্টে গভীর সমুদ্রে পড়েছিলেন কানু। টানা চারটে দিন ভেসেছিলেন এক টুকরো বাঁশ আঁকড়ে। সঙ্গে আরও যাঁরা পড়েছিলেন জলে, তাঁদের কাউকে কাউকে চোখের সামনে ভেসে যেতে দেখেছেন। তবু মনের জোরে চালিয়ে গিয়েছেন লড়াই। একটি পণ্যবাহী জাহাজ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে কানুকে।
শনিবার বেশ রাতে নামখানার নারায়ণপুরের বাড়িতে পৌঁছনি কানু। শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে ভিডিয়ো কলে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এ দিন তাঁর স্ত্রী বন্দনা বলেন, ‘‘এই মরসুমেই প্রথম মাঝির দায়িত্ব পেয়েছিল। বার তিনেক সমুদ্রে গিয়েছে ট্রলার নিয়ে। তারপরেই এই বিপত্তি।’’কানু ফিরলেও গ্রামের আরও চারজন মৎস্যজীবী এখনও নিখোঁজ। ফলে পরিবেশ থমথমে। সব মিলিয়ে চারটি ট্রলার ডুবে নিখোঁজের সংখ্যাটা এখনও ২৩। বেশ কয়েকটি ট্রলার এখনও ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ থেকে। সেখানেও আছেন বেশ কয়েক জন। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি জানালেন, ভারতীয় এবং বাংলাদেশ উপকূল রক্ষী নিখোঁজদের খোঁজ চালাচ্ছে। তবে আবহাওয়া ভাল না হওয়ায় কাজে অসুবিধা হচ্ছে।’’
নিখোঁজ মৎস্যজীবী গোবিন্দ দাসের স্ত্রী রুপালি এ দিন বছর চারেকের মেয়ে তুহিনাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন থানায়। সেখানে ডায়েরি করেন। জানালেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করেন স্বামী। বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় মাছ ধরতে যাবেন ভেবেছিলেন। তবে এ ব্যাপারে ট্রলার মালিকের পক্ষ থেকেই জোরাজুরি করা হয়েছিল। হাজার কুড়ি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। ফলে না গিয়ে উপায় ছিল না। রুপালি বলেন, ‘‘যখন বাড়ি থেকে বেরোল, তখনও আবহাওয়া ভাল নয়। আমি বার বার বারণ করেছিলাম। কিন্তু বলল, না গিয়ে উপায় নেই।’’
রুপালির মেয়ে তুহিনা জানে বাবা অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। মায়ের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন করছে, ‘‘বাবা কখন ফিরবে?’’
মেয়ের প্রশ্ন শুনে বার বারই আঁচলে চোখ মুছছেন রূপালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy