অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস
বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসে মেছোভেড়িতে রাতপাহারার কাজ জুটিয়ে নিয়েছিল আশিক গাজি। ডাকাবুকো লোকজনকেই সাধারণত এই পেশায় নেওয়া হয়। আশিকের স্বভাবও ছিল সে রকম। তাকে এলাকার লোকজন এড়িয়ে চলত। গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ আগেও উঠেছিল আশিকের বিরুদ্ধে, জানালেন বসিরহাটের ঝুরলি গ্রামের মানুষজন। ভেড়িতে মদ-জুয়ার আসর জমিয়ে রাখত আশিক, জানতে পারছে পুলিশ।
ঝুরলি গ্রামের তরুণী বধূ মারুফাকেও নানা ভাবে উত্যক্ত করত সে। অভিযোগ, সেই রাগে মঙ্গলবার সকালে আশিকের গলায় ভোজালি চালিয়ে তাকে খুন করেন মারুফা। বসিরহাটের খোলাপোতার কাছে ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ধরে ফেলেন মারুফা, তাঁর স্বামী আরিজুল ও এক আত্মীয়কে। তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বুধবার তিনজনকে বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক মারুফা এবং আরিজুলকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন। আজাহারউদ্দিন নামে ধৃত আর একজনকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
মারুফা ও তাঁর স্বামী আরিজুলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, আশিককে ঘরে গ্রামে নিয়ে গিয়ে সালিশির কথা ভেবেছিলেন আরিজুলরা। স্ত্রীর কাছ থেকে আশিকের কুকীর্তির কথা জেনেছিলেন আরিজুল। দু’টি বাইকে গ্রামের ৫ জন বেরিয়ে পড়েন আশিককে ধরে আনতে। কিন্তু তার আগেই স্ত্রী যে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন, তা ঠাহর করতে পারেননি আরিজুল, এমনটাই তিনি জানিয়েছেন তদন্তকারীদের।
মাটিয়া থানার পুলিশ দু’টি মোটর বাইক এবং ভোজালি উদ্ধার করেছে। খোঁজ চলছে একটি মোটর বাইক-সহ আরিজুলের বাকি সঙ্গীদের। এ দিকে, বসিরহাট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হলেও আশিকের দেহ নিতে এখনও আসেনি কেউ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের সাতক্ষিরা থেকে চোরাপথে এ দেশে এসেছিল আশিক। পরিচিত একজনের মাধ্যমে পাহারার কাজ জুটিয়ে নেয় ভেড়িতে। তবে তার চাল-চলন ভাল ছিল না বলে জানাচ্ছেন গ্রামের অনেকেই। বেশি দিন এক ভেড়িতে কাজ টিকত না আশিকের। গত কয়েক বছরে একাধিক বার চাকরি বদলাতে বাধ্য হয়েছে সে। কখনও ঝুরুলি, কখনও মাটিয়া এলাকায় দেখা যেত তাকে।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাটের মাটিয়া থানার চৈতা, রাজেন্দ্রপুর, চাঁপাপুকুর, মাটিয়ায় শতাধিক মেছোভেড়ি আছে। সেখানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করা হয়। মেছোভেড়ির কাজে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি। এদের কাজ মূলত মাছ ধরা, খাবার দেওয়া এবং মাছ চুরি ঠেকানো।
আশিকের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হয়েছিল মারুফার। কিন্তু বন্ধুত্বের থেকেও তার দাবি ছিল অনেক বেশি। মারুফাকে সংসার ছেড়ে তার সঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে বলে জোর করত আশিক। নানা ভাবে উত্যক্ত করত বলে অভিযোগ। এক দিন সে সব কথা বলে শাশুড়ি আকলিমা বিবির কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই সন্তানের জননী মারুফা। জানতে পারেন আরিজুলও। সালিশি সভায় ধরে আনবেন আশিককে, এমনই ভাবেন তিনি। আকলিমা বলেন, ‘‘ছেলে বাড়ি না থাকার সুযোগে বৌমাকে উত্যক্ত করত লোকটা। স্বামী-সন্তানদের খুন করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিত। আর সেটা মেনে নিতে পারছিল না বৌমা।’’ তবে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল আশিকের। সে জন্য তাকে লোকে ভয়ও করত বলে জানিয়েছেন আকলিমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy