ঘটনাস্থল: এখানেই হামলা হয়েছিল বিধানের (ইনসেটে) উপরে। বৃহস্পতিবার রাতে ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক।
বাবার বাইকের শব্দ পেয়েছিল ছেলে। কিন্তু কই বাবা তো এলেন না? চিন্তায় পড়ে যান ছেলে। ফোন করলেও লাইন ঢোকেনি। খানিকক্ষণ পরে বাড়ি থেকে এগিয়ে দেখেন, বাড়ির সামনেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাবার রক্তাক্ত দেহ। চোখ-মুখে মাফলারের ফাঁস দেওয়া।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটার কাহনকিয়া এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম বিধান সরকার (৫৯)।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, শুক্রবার সকালে বিধানের শ্যালিকার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলায় শাড়ির ফাঁস দেওয়া ছিল। তিনি বিধানের বাড়ির কাছেই থাকতেন। বিধানই তাঁকে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। দু’টি মৃত্যুর মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারীরা। বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান, পুরনো শক্রতার জেরেই বিধানকে খুন করা হয়েছে। সম্ভাব্য অন্য কারণগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’ ওই মহিলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মহিষাকাটি মোড়ে বিধানের মাছের খাবার দোকান ও একটি আসবাপত্রের দোকান আছে। এলাকায় একটি বেসরকারি কলেজ করেছিল যৌথ ভাবে। বৃহস্পতিবার রাতে দোকান বন্ধ করে মহিষাকাটি মোড় থেকে বাইক চালিয়ে বিধান একাই বাড়ি ফিরছিল। দুষ্কৃতীরা বাড়ির কাছে লুকিয়ে ছিল। বিধান বাড়িতে ঢোকার মুখে পথ আটকায়। চোখে-মুখে মাফলারে পেঁচিয়ে কুপিয়ে খুন করে। গলার নলি কেটে দেয়। খুনের পদ্ধতি দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় কয়েকজন ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে গরু পাচার, মাদক পাচারে বিধানের নাম জড়িয়েছিল। গাইঘাটা সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গরু পাচার সে নিয়ন্ত্রণ করত বলে অভিযোগ। বিধানের নিজস্ব দলবল ছিল। গাইঘাটা থানায় বিধানের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে। মামলাগুলি গরু পাচার, সীমান্তে তার কাঁটা কাটা, মাদক পাচার ও আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের। সিআইডির কাছেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।
২০১৬ সালে গাইঘাটা থানার পুলিশ তাকে মাদক এবং প্রচুর গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার করে। তবে ২০১৮ সালের শেষ দিকে জামিনে ছাড়া পেয়ে দুষ্কর্ম ছেড়ে ব্যবসায় মন দিয়েছিল বিধান। তবে পুরনো পেশার কারণে শত্রুর অভাব ছিল না।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকার গরিব মানুষের জন্য বরাবরই দরাজ হাত ছিল বিধানের। অনেক গরিব মানুষের বিয়ে, শ্রাদ্ধ, চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্য দানধ্যান করত। মানুষের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াত। বিধানের ছোট ছেলে রাজা বলেন, ‘‘রাত তখন সওয়া ৯টা হবে। বাবার বাইকের শব্দ পাই। কিন্তু কয়েক মিনিট কেটে গেলেও বাবা বাড়ির না ঢোকায় খটকা লাগে। কুকুর ডাকছিল ছাদে। টর্চ নিয়ে ছাদে গিয়ে কিছু দেখতে পাইনি। মাকে বলি বাবাকে ফোন করতে। ফোনে লাইন ঢোকেনি। এরপরেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি, বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে। চোখ-মুখ বাঁধা। সারা শরীরে কোপানোর চিহ্ন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy