—ফাইল চিত্র।
জেলার রাজনীতিতে এক সময়ে ‘সাপে-নেউলে’ সম্পর্ক ছিল মুকুল রায় এবং অর্জুন সিংহের। সেই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুনের সঙ্গে বরাবরই ‘তিক্ত’ সম্পর্ক মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের। এখন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের আবহে সেই শুভ্রাংশুকেই দেখা গেল অর্জুনের পাশে দাঁড়াতে। সাংসদ ‘ভাল সংগঠক’ আখ্যা দিয়ে মুকুল-পুত্রের বক্তব্য, অর্জুনকে ভয় পান বলেই লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন দুই তৃণমূল বিধায়ক!
গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের দুই নেতার একে অপরের বিরুদ্ধে বাক্যবাণে তপ্ত ছিল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। এক দিকে অর্জুন। অন্য দিকে, জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম। শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি মিটমাটের চেষ্টা করলেও দ্বন্দ্ব এখনও জিইয়ে রয়েছে। তা নিয়ে এ বার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন মুকুল-পুত্র। শুভ্রাংশুর অভিযোগ, দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অমান্য করছেন জেলার কিছু নেতা। কেউ কাউকেই মানছেন না! তবে এই গোষ্ঠীকোন্দলে অর্জুনেরই পক্ষ নিতে দেখা গেল শুভ্রাংশুকে। এককালে মুকুল এবং অর্জুনের যা পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল, তার নিরিখে শুভ্রাংশুর প্রকাশ্যে সাংসদের পাশে দাঁড়ানো সাম্প্রতিক অতীতে কখনও দেখা গিয়েছে বলে কেউ মনে করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘অর্জুন সিংহের সঙ্গে আমার মতের মিল নেই। তবু অর্জুন সিংহ ভাল সংগঠক। তাই অর্জুন সিংহকে অনেকে ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে বলেই ও সব কথা বলছে।’’
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য নাম না করে সোমনাথ এবং বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুবোধ অধিকারীকেই আক্রমণ করেছেন মুকুল-পুত্র। তিনি বলেন, ‘‘এক জন ২০১৯ সালে কংগ্রেস করতেন। অন্য জন বিজেপি। আমি তখন তৃণমূল করতাম। যারা ২০১৯ সাল নিয়ে এত কথা বলছেন, তারা বুথেরই কর্মীদের চেনে না। যে ভাবে দুই বিধায়ক প্রকাশ্যে মঞ্চে একের পর এক কুরুচিকর কথা বলছেন, তাতে দলীয় কর্মীদের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।’’
গত বছর ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে এক দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় অর্জুন ও সোমনাথের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছে। শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের বক্তব্য, মিলের শ্রমিকদের ঠিকাদারি নিয়েই মূলত দুই নেতার গন্ডগোলের সূত্রপাত। মেঘনা জুটমিলের নিয়ন্ত্রণ যেমন অর্জুনের হাতে, তেমনই অ্যালায়েন্স জুটমিল সোমনাথের ‘দখলে’। এলাকার লোকেরা জানেন, অর্জুন বিরোধিতার রাজনীতিকে পুঁজি করে মূলস্রোতে এসে পড়েছিলেন সোমনাথ। ফলে ২০১৯ সালে অর্জুন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই সোমনাথ যান তৃণমূলে। ঘটনা পরম্পরা দেখিয়েছিল, অর্জুন যে দিন বিজেপিতে যোগ দিলেন, ঠিক তার পর দিনই তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে জোড়াফুল আঁকা পতাকা নিয়েছিলেন সোমনাথ।
ব্যারাকপুরে দলের একাংশের দাবি, অর্জুন বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরেই দলে সোমনাথের উত্থান হয়। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও ‘দাপট’ বা়ড়তে থাকে তাঁর। ২০২১ সালে অর্জুনের দলে প্রত্যাবর্তনের পর সেই গতি খানিকটা হলেও থমকে গিয়েছে। এর ফলে দুই নেতার বিবাদ অবশ্যম্ভাবীই ছিল। কিন্তু এত দিন তা দলের অন্দরেই সীমিত ছিল। প্রকাশ্যে কেউ কোনও মন্তব্য করতেন না। বা করলেও কেউ কারও নাম নিতেন না। কিন্তু ভিকি খুনের পর সেই বিবাদকে আর ধামাচাপা দিয়ে রাখা গেল না! বিবাদ এতটাই ধারালো যে, সম্প্রতি তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ডাকা ‘মীমাংসা বৈঠকে’ যানওনি সোমনাথ। বলেছেন, বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেই তিনি জানতেন না! যদিও অর্জুন শিবিরের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য লাগেনি। তাদের মতে, ‘সাহস’ পেয়েই বক্সীর বৈঠককে পাত্তা দেননি সোমনাথ। নইলে প্রথম বারের বিধায়ক অর্জুনের মতো পোড়খাওয়া সাংসদের বিরুদ্ধে (পাশাপাশি, দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধেও) টক্কর নিতে যেতেন না। যদিও পরে জেলার কোর কমিটির বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই নেতা। কিন্তু দূরত্ব ছিলই। তার কয়েক দিন সেই বিবাদ আড়ালে থাকলেও বুধবার তা আবার প্রকাশ্যে আনলেন মুকুল-পুত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy