Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

মাকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেল মেয়েও

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের চাঁপাপুকুর গ্রামে হাসনাবাদ-শিয়ালদহ লাইনে। রেলপুলিশ জানায়, রঘুনাথপুরের মধ্যপাড়ায় থাকতেন সারুফা বিবি (২৪) এবং তাঁর মেয়ে আনিকা (৬)।

স্মৃতি: লাইনের উপরে পড়ে আনিকার জুতো। ছবি: নির্মল বসু।

স্মৃতি: লাইনের উপরে পড়ে আনিকার জুতো। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

তারস্বরে চিৎকার করছিল একরত্তি মেয়েটা। কাঁদছিল। আর ছোট্ট দু’হাতে মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে টানছিল।

মেয়ের টানে পুরো শরীরটা লাইনের উপরে ফেলতে পারছিলেন না। কিন্তু একটা পা তখনও লাইনের উপরে। সেটা নিমেষে কেটে বেরিয়ে যায় ট্রেনের চাকায়। এক ঝটকায় শরীরটা ঢুকে যায় ট্রেনের নীচে। আর ধাক্কা লেগে লাইনের পাশে ছিটকে পড়ে ছ’বছরের মেয়ের রোগা-পাতলা শরীরটা।

দূর থেকে ঘটনাটা দেখতে পেয়ে ছুটে আসেন অনেকে। ততক্ষণে অবশ্য সব শেষ।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের চাঁপাপুকুর গ্রামে হাসনাবাদ-শিয়ালদহ লাইনে। রেলপুলিশ জানায়, রঘুনাথপুরের মধ্যপাড়ায় থাকতেন সারুফা বিবি (২৪) এবং তাঁর মেয়ে আনিকা (৬)। দেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বারাসতে পাঠানো হয়েছে।

লাইনের ধারে মাঠে কাজ করছিলেন যাঁরা, তাঁদের কয়েকজনের চোখে পড়ে ঘটনাটা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে রেলপুলিশের অনুমান, মা আত্মহত্যার চেষ্টা করায় বাঁচাতে চেয়েছিল মেয়ে। তবে কেন সারুফা আত্মহত্যা করতে গেলেন, তার স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। পরিবারও এ নিয়ে অন্ধকারে। সে ক্ষেত্রে সারুফার পা কোনও ভাবে লাইনে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

সারুফার স্বামী মোজাফ্ফর সর্দার ট্রাক চালান। স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। বড় মেয়ে আনিকা পড়ত একটি বেসরকারি স্কুলের আপার নার্সারিতে। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাকে নিয়ে স্কুলে যান সারুফা। বেরোনোর আগে শাশুড়ি হামিদাকে বলে যান, স্কুলের অনুষ্ঠান শেষে মেয়েকে নিয়ে যাবেন হাড়োয়ার শালিপুর কুচিয়া মোড়ে বাপের বাড়িতে। সেখান আছে ছোট মেয়ে আনিয়া। দুই মেয়েকে নিয়ে সন্ধ্যায় ফেরার কথা ছিল বাড়িতে।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, স্কুলের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়ে পড়েন সারুফা। হাড়োয়ার ট্রেন ধরতে যেতে হয় চাঁপাপুকুর স্টেশন। স্টেশনের বেশ কিছুটা আগে দেবীপুর গ্রামে রেল লাইনের বরাবর চাঁপাপুকুরের দিকে হাঁটতে থাকেন মেয়েকে নিয়ে। এক সময়ে দু’জনে বসে পড়েন লাইনের ধারে। তারপরেই ঘটে বিপত্তি।

সে দৃশ্য দেখতে পেয়ে গ্রামের মানুষ দৌড়ে এসে দেখেন, সারুফার দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লাইনের পাশে ছিটকে পড়েও আনিকার শরীর প্রায় অবিকৃত। পরনে ইউনিফর্ম। গলায় স্কুলের কার্ড ঝুলছে। জুতো দু’টো শুধু খুলে গিয়েছিল। অন্য ট্রেনের ধাক্কায় যাতে তার শরীরও খণ্ড খণ্ড না হয়ে যায়, গ্রামের মানুষ আনিকার দেহ লাইনের পাশ থেকে তুলে রেলগেটের কাছে এনে রাখেন।

যে এলাকায় মারা গিয়েছে মা-মেয়ে, তার কাছাকাছি কয়েকজন আত্মীয় থাকেন। তাঁদের কারও সঙ্গে দেখা করতেই সারুফা লাইন ধরে হাঁটছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। মোজাফ্ফর বলেন, ‘‘আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি, যাতে করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।’’ দেখা হলেই একগাল হাসতেন সারুফা, জানালেন পড়শিরা। সংসারে কোনও অশান্তি ছিল বলে তাঁরাও শোনেননি।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা লিলি মণ্ডল জানালেন, ভাল ছাত্রী ছিল আনিকা। এ বারও ভাল ফল করেছিল ক্লাসে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy