Advertisement
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কেন ছবি তুলতেন মেয়েদের, উত্তর নেই বার্কের

পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিলেও তদন্তে বিশেষ সাহায্য করছে না বার্ক।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৩:২৬
Share: Save:

সন্ত টেরিজাই নাকি তার আদর্শ। তাঁর টানেই নাকি সে সুদূর উত্তর কোরিয়া থেকে জগদ্দলে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল। উত্তর কোরিয়ার সেই জিন কিঁউ বার্ক আপাতত শ্রীঘরে। নিজের আশ্রমের ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে নিলেও তদন্তে বিশেষ সাহায্য করছে না বার্ক। তবে আশ্রমের ছাত্রীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, নিজের ঘরে ডেকে বার্ক শুধু তাদের যৌন নির্যাতনই করেনি, তাদের আপত্তিকর ছবিও তুলে রেখেছে। ওই আশ্রমের আয়ের উৎস কী, বার্ক কোন ভিসা নিয়ে দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এ দেশে রয়েছে— এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি। যার ফলে পুলিশও পড়েছে বিপাকে।

জগদ্দলের পানপুরে ‘ওয়েজলিন মিশন আশ্রম’ নামে একটি হোম তৈরি করেছিল বছর বাষট্টির বার্ক। গত ১৯ বছর ধরে হোমটি সে নিজেই চালাচ্ছে। দিপু সরকার নামে এক যুবতী ছিল তার সহকারী। ওই আশ্রমে ৩৬ জন কিশোরী ছাত্রী ছিল। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই কিশোরীদের বাড়ির লোকেদের কাছ থেকে রীতিমতো মুচলেকা সই করিয়ে নিয়েছিল বার্ক। যাতে লেখা ছিল, তাঁরা স্বেচ্ছায় মেয়েদের বার্কের আশ্রমে রাখছেন। তাদের কিছু হলে বা কোথাও চলে গেলে তার জন্য বার্ক দায়ী থাকবে না।

অভিযোগ, ফি রাতে এক জন করে কিশোরীর ডাক পড়ত বার্কের ঘরে। দিপুই তাদের বার্কের ঘরে পাঠাত। কেউ রাজি না হলে তাদের মারধর করত দিপু। হুমকি দেওয়া হত, বিষয়টি কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। ছাত্রীদের এক জন পুরো বিষয়টি স্কুলের এক শিক্ষককে জানায়। সেখান থেকে জেলা নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর তা জানতে পারে। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ ১১ মে রাতে বার্ক ও দিপুকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করা হয়েছে।

আইনি জটিলতায় প্রথমে বার্ককে হাতে না পেলেও দিন কয়েক আগে তাকে হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। মামলাটি ব্যারাকপুর মহিলা থানায় পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কাছে বার্ক দাবি করেছে, মাদার টেরিজার টানেই কলকাতায় এসে শহরতলিতে আশ্রম গড়েছিল সে। কিন্তু ছাত্রীদের যৌন নির্যাতন? বার্ক পুলিশকে বলেছে, ‘‘আমি ওদের বাবার মতো। মেয়েরা তো বাবার সেবাযত্ন করতেই পারে। এর মধ্যে খারাপ কী আছে?’’ কিন্তু মোবাইলে তাদের ছবি তুলে কেন রাখতেন? পুলিশকে বার্কের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সে কথা আপনাদের কেন বলব?’’

সে কোনও চাকরি করে না। তা হলে আশ্রম চালানোর বিপুল খরচ আসে কোথা থেকে? সেই প্রশ্নেরও উত্তর দেয়নি বার্ক। পুলিশ জানিয়েছে, বার্কের ঘর থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মোবাইল-ল্যাপটপও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বার্কের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন পরীক্ষা করা হবে। পুলিশ জানতে পেরেছে, আশ্রম চালানোর টাকা আসত বিদেশ থেকেই। কোন দেশ থেকে, কারা টাকা পাঠাত, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE