n প্রস্তুতি: চলছে মাছ ধরার জাল তৈরি ও সারাইয়ের কাজ। কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দরে। ছবি: দিলীপ নস্কর।
গত দুই মরসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ আসেনি বাজারে। এ বারও বাঙালির পাতে ইলিশের জোগান নিয়ে সংশয় থাকছে। সমুদ্রে ইলিশ-সহ অন্য মাছ ধরার মরসুম শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকে। প্রতি বছর এই সময়ে দফায় দফায় কয়েক হাজার ট্রলার মাছের খোঁজে সমুদ্রে পাড়ি দেয়। গত দুই মরসুমে মাছ তেমন না ওঠায় অর্থনৈতিক সঙ্কটে ছিলেন মৎস্যজীবীরা। এ দিকে, আমপান ও ইয়াসে বহু ট্রলারের ক্ষতি হয়েছে। যা এখনও মেরামত করা যায়নি। ফলে বহু ট্রলারই এ বার সমুদ্রে যাচ্ছে না।
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন বন্দর থেকে প্রতি বছর প্রায় আট হাজার ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু এ বার মাত্র হাজার চারেক ট্রলার মাছ ধরতে যাবে বলে এখনও পর্যন্ত খবর। বর্ষার আগে প্রতি বছরই সরকারি নির্দেশে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। ১৫ জুন থেকে ফের সমুদ্রে পাড়ি দেন মৎস্যজীবীরা।
সোমবার কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দরে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু ট্রলারে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে ট্রলারের সংখ্যা অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, মাঝি-সহ জনা পনেরো মৎস্যজীবী থাকেন এক একটি ট্রলারে। সমুদ্রে টানা দিন দশেক থেকে মাছ ধরা হয়। একেক বার সমুদ্রে যাওয়ার জন্য ট্রলার পিছু ৩০-৪০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। মাছ বিক্রি করে সেই টাকা ওঠে। কিন্তু গত দু’বছর সমুদ্র থেকে প্রায় খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে বহু ট্রলারকে। ফলে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। বহু ট্রলার-মালিক ঋণ করে সমুদ্রে ট্রলার নামান। পরে মাছ বিক্রি করে টাকা শোধ করেন। কিন্তু গত দু’বছর তাঁদের অনেকেই ধার শোধ করতে পারেননি। ফলে এ বার ট্রলার নামাতে চাইছেন না অনেকে। জ্বালানির দাম বাড়ায় এ বার খরচও অনেকটা বাড়বে বলে জানাচ্ছেন মৎস্যজীবীরা।
তার উপরে গত বছর আমপান ও এ বার ইয়াসের ধাক্কায় বহু ট্রলারের ক্ষতি হয়েছে। সাধারণত হুগলি, বর্ধমান জেলা থেকে ট্রলার মেরামতের মিস্ত্রিরা আসেন। সারানোর সরঞ্জাম আনা হয় কলকাতা থেকে। কিন্তু এ বার করোনা পরিস্থিতিতে কড়াকড়ির জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় মিস্ত্রিরা আসতে পারেননি। কলকাতা থেকে সারানোর সরঞ্জামও আনা সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক ট্রলারই মেরামত করে উঠতে পারেননি মালিকেরা। এর জেরেও কিছু ট্রলার সমুদ্রে নামতে পারছে না।
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “প্রতি বছর যে পরিমাণ ট্রলার সমুদ্রে যায়, এ বার কার্যত তার অর্ধেক ট্রলার যাবে। গত দু’বছর সে ভাবে ইলিশ মেলেনি। ফলে ট্রলার মালিকদের লোকসানের বহর বেড়েছে। সমুদ্রে ট্রলার পাঠাতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে হয়েছিল। অনেকেই সেই টাকা শোধ করতে পারেননি। আমপান, ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসেও বহু ট্রলার ভেঙেছে। করোনা পরিস্থিতিতে সেগুলিও সারানো যায়নি।” বিজন জানান, এর জেরে ট্রলার মালিকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তেমনই ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। অনেকেই এই পরিস্থিতিতে কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছেন।
কাকদ্বীপের বাসিন্দা বিশ্বনাথ মণ্ডলের ৮টি ট্রলার প্রতি বছর সমুদ্রে যায়। তবে এ বার একটিও যাচ্ছে না। বিশ্বনাথ বলেন, “গত দু’বছর মাছ না হওয়ায় বড় ক্ষতি হয়েছে। তাই ঠিক করেছি, এ বার আর ট্রলার নামাবো না। প্রথম দফায় যারা যাচ্ছে, তারা যদি মাছ নিয়ে ফেরে, তা হলে পরের দফায় ট্রলার পাঠানোর কথা ভাবব।”
এ দিন কাকদ্বীপ বন্দরে সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতির মাঝেই অবশ্য আশার এক শোনালেন প্রবীণ মৎস্যজীবী। নবকুমার মণ্ডল নামে ওই মৎস্যজীবীর কথায়, “প্রায় তিরিশ বছর ধরে সমুদ্রে যাচ্ছি। এ বার আবহাওয়া খুব ভাল। পূবালি বাতাস বইছে। গত দু’বছর একেবারে মাছ হয়নি। তবে এ বার মনে হচ্ছে ভাল ইলিশ পাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy