Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
SSC Upper Primary Recruitment

জুতো সেলাই করে এত দিন সংসার চালাচ্ছিলেন সুভাষ

২০১৬ সালে হয়েছিল উচ্চ প্রাথমিকের পরীক্ষা। তারপরে একাধিক মামলা-মোকদ্দমায় আটকে ছিল নিয়োগ। এ বার হাই কোর্টের রায়ে চাকরির স্বপ্ন দেখছেন প্রায় ১৪ হাজার পরীক্ষার্থী। এত দিন কেমন ছিলেন তাঁরা। কী ভাবে কেটেছে দিন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

জুতো সেলাইয়ের কাজে মন দিয়েছেন সুভাষ। ছবি: নবেন্দু ঘোষ 

জুতো সেলাইয়ের কাজে মন দিয়েছেন সুভাষ। ছবি: নবেন্দু ঘোষ 

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪৯
Share: Save:

হিঙ্গলগঞ্জের সুভাষচন্দ্র দাস হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ বাজারে অনেক দিন ধরেই জুতো সেলাই করেন। কয়েক জন এসে বৃহস্পতিবার খবর দেন, এ বার সুদিন ফিরবে! প্রথমটায় বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সুভাষ। তাঁকে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে দেখান শুভানুধ্যায়ীরা। আবেগবিহ্বল হয়ে পড়েন সুভাষ। বললেন, ‘‘দীর্ঘ আট বছর ধরে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। মা মারা গেলেন ২০২২ সালে, রোগে ভুগে। চাকরিটা তখন পেলে হয় তো ভাল চিকিৎসা করাতে পারতাম!’’ জুতো সেলাই করে আর বাড়িতে কয়েক জন বাচ্চাকে পড়িয়ে মাসে ৩-৪ হাজার টাকা উপার্জন করেন সুভাষ। তাঁর কথায়, ‘‘দেখি কবে নিয়োগপত্র পাই। দেখতে দেখতে বয়স তো ৪৫ পেরিয়ে গেল! কে ফিরিয়ে দেবে অতীতের সেই দিনগুলো। সত্যি যদি চাকরি হয় তাহলে আগামী কয়েকটা বছর অন্তত খেয়েপরে বাঁচতে পারব।’’ যদিও বেতন হাতে না পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতিকে আর খোলামনে বিশ্বাস করতে পারেন না এখন।

২০১৬ সালের মেধা তালিকায় প্রথম দিকেই নাম ছিল কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার চড়িশ্বরের বাসিন্দা জুলফিকার আলি মোল্লার। নিয়োগপত্র না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রী, দুই সন্তানের ভরণপোষণের জন্য গৃহশিক্ষকতা করেন। জুলফিকারের কথায়, ‘‘হাই কোর্টের রায়ের পরে এখন যদি নিয়োগপত্র পাই, তা হলে আমার মতো অনেকেই খুবই উপকৃত হবেন। আর এ বারও যদি নিয়োগপত্র না পাই, তা হলে আর চাকরির বয়স থাকবে না!’’

ভাঙড়ের বাগানআইটের বাসিন্দা নাসিরউদ্দিন মোল্লারও নাম ছিল মেধা তালিকায়। নিয়োগপত্র না পেয়ে ভাঙড়ের একটি স্কুলে পার্ট টাইম শিক্ষকতা করেছেন এত দিন। বিয়ে করার পরে একটি সন্তানও হয়। গৃহশিক্ষকতাও করতে হয়েছে সংসার সামলাতে। তাঁর কথায়, ‘‘যতক্ষণ নিয়োগপত্র না হাতে পাচ্ছি, ততক্ষণ মানসিক শান্তি পাচ্ছি না।’’

ভাঙড়েরই রঘুনাথপুরে থাকেন মিজানুর হক। ২০১৬ সালের প্যানেলে নাম ছিল। পরে প্রাথমিকেও চাকরি পান ২০২১ সালে। নলপুকুর প্রাইমারি স্কুলে পড়ান তিনি। মিজানুরের কথায়, ‘‘সুযোগ পেলে প্রাথমিক ছেড়ে উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি করার ইচ্ছে আছে তবে যতক্ষণ না নিয়োগপত্র পাচ্ছি, কিছু বলার নেই। হাই কোর্টের নির্দেশকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’

হাসনাবাদের আব্দুর রহমান মণ্ডলের কাউন্সিলিং হয়ে গিয়েছিল ২০১৬ সালেই। টাকির একটি স্কুল বেছেছিলেন বলে জানালেন। এত দিন গৃহশিক্ষকতা করে সংসার টানছিলেন। পাশাপাশি একটি স্কুলে সামান্য টাকার বিনিময়ে পড়াতেন। বললেন, ‘‘স্ত্রী, সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। এই আট বছর অবর্ণনীয় আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে কেটেছে। এ বার কিছুটা আশার আলো দেখছি।’’

বনগাঁর মদনমোহন রায় কাউন্সেলিংয়ে মুর্শিদাবাদের একটি স্কুল পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু নিয়োগ হয়নি সে সময়ে। নিজের পছন্দ মতো স্কুল এখন পাবেন কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। তবে জানালেন, বনগাঁ হাই স্কুলে (প্রাথমিক) শিক্ষকতা করছেন। তবে ইচ্ছে আছে, হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy