Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
নাম জানাজানি হবে না তো, উঠছে প্রশ্ন

দিদিকে বললেও কথা শুনছে কে!

‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর পেরিয়ে গিেয়ছে এক এক মাস। এই পরিষেবা চালুর পর থেকেই বহু মানুষ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে ফোন করেছেন দফতরে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই যেমন চটজলদি সমাধান পেয়েছেন, অনেকে আবার বারবার ফোন করেও সমাধানের কোনও আশ্বাস পাননি। মানুষের এই অভিজ্ঞতার কথা শুনল আনন্দবাজার। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির কথা জানতে পেরে আশ্বস্ত হয়েছিলেন পবিত্র। ভেবেছিলেন, ফোন করে হাসপাতালের পরিস্থিতি জানাবেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:০১
Share: Save:

গোবরডাঙার প্রবীণ বাসিন্দা পবিত্র কুমার মুখোপাধ্যায়। গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদের সহ সভাপতিও তিনি। বহু দিন ধরে সংগঠনটি গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। কয়েক বছর হল হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ। আগে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার হত। সেটাও এখন বন্ধ। সপ্তাহে ৪-৫ দিন দিনের বেলা রোগী দেখেন একমাত্র চিকিৎসক।

‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির কথা জানতে পেরে আশ্বস্ত হয়েছিলেন পবিত্র। ভেবেছিলেন, ফোন করে হাসপাতালের পরিস্থিতি জানাবেন। কিন্তু কয়েক বার ফোন করেও তিনি হাসপাতাল নিয়ে সমস্যার কথা জানাতে পারেননি। তাঁকে বলা হয়েছে, তাঁর নম্বরটি রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ফোন করা হবে। কয়েক দিন কেটে গেলেও পবিত্র ফোন পাননি। হতাশ তিনি।

পবিত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১ অগস্ট সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তিনি ‘দিদিকে বলো’ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন। তাঁকে বলা হয়, সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টার মধ্যে ফোন করতে। ৩ অগস্ট তিনি সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ফোন করেন। এক মহিলা ফোন ধরেন। ও প্রান্ত থেকে জানান, তাঁর ফোন নম্বরটি রেজিস্টার করা হল। পরে তাঁকে ফোন করে নেওয়া হবে। এরপরে ফোন না আসায় তিনি ৭ অগস্ট ফের ফোন করেন। তখন তাঁর নাম, বয়স, ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। আরও জানতে যাওয়া হয়, সমস্যাটি ‘ব্যক্তিগত’ না ‘সামগ্রিক।’ পবিত্র জানান, ‘সামগ্রিক।’ তাঁকে বলা হয়, পরে তাঁকে ফোন করে নেওয়া হবে। ১১ অগস্ট ফোন করলে ফের বলা হয়, তাঁর নম্বরটি নথিভুক্ত আছে। নির্দিষ্ট সময়ে ফোন করা হবে।

পবিত্রর কথায়, ‘‘২৮ অগস্ট সকাল পর্যন্ত আমার কাছে কোনও ফোন আসেনি। হাসপাতাল নিয়ে আমাদের সমস্যার কথা এখনও জানানোর সুযোগ পাইনি।’’

হাসপাতালের সমস্যার কথা জানাতে চেয়ে আরও কয়েক জন ফোন করেছিলেন। তাঁদের কেউ লাইন পাননি। কারও বা ফোন নম্বর নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

তবে এখনও পর্যন্ত ওটুকুই।

তবে গোবরডাঙার কয়েক জন মানুষ ‘দিদিকে বলো’ ফোন নম্বরে ফোন করে উপকৃতও হয়েছেন বলে জানা গেল। যদিও ‘হতাশ’ মানুষের সংখ্যাটাই বেশি।

নিজের কেনা জায়গা জবরদখল হয়ে গিয়েছিল বছর আটেক আগে। নেতা-মন্ত্রী, থানা-পুলিশ করেও সুরাহা হয়নি। সম্প্রতি আশার আলো দেখেছিলেন হাবড়ার ডহরথুবা এলাকার বাসিন্দা পিঙ্কি দাস। দিদিকে বলোতে ফোন করেন তিনিও। তাঁর কথায়, ‘‘বহু বার ফোন করে আমি সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, ২০ দিনের মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে। ওঁরাই যোগাযোগ করবেন। আজও সমস্যা মেটেনি।’’ সম্প্রতি তিনি নিজেই জমির দখল নিয়েছেন। তবে ইচ্ছে অনুযায়ী সেখানে দোকানঘর করতে পারেননি। বাধা পাচ্ছেন। পিঙ্কি জানিয়েছেন, তৃণমূলের লোকজনই গোটা ঘটনায় জড়িত। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা মহিলার পাশে রয়েছেন। সহযোগিতা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দিদিকে বলো ফোন নম্বরে ফোন করা নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন উৎসাহ নেই বনগাঁ, হাবড়া এলাকায়। অনেকেই জানালেন, ফোন করার চেষ্টা করেছিলেন বহু বার। কিন্তু লাইনই পাননি। এক সময়ে উৎসাহ হারিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘আমার কাছে পঞ্চায়েতে দুর্নীতির নানা নথি আছে। কিন্তু দিদিকে বলোতে বলতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ, অভিযোগ সবই তৃণমূলের দিকে। শেষে নেতাদের কোপে না পড়তে হয়!’’

এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমার কিছু ব্যক্তিগত সমস্যা রয়েছে। ভেবেছিলাম ফোন করব। কিন্তু জানতে পারলাম, ফোন করলে নাকি রাজনৈতিক পরিচয় জানতে যাওয়া হচ্ছে। সে কারণে আর ফোন করিনি।’’

কেউ কেউ জানালেন, তাঁরা ভেবেছিলেন, দিদিকে বলোতে ফোন করলে বুঝি মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি ফোন ধরবেন। কিন্তু দিদি তো ফোন ধরছেন না। ফলে তেমন আগ্রহ নেই মানুষের।

বনগাঁ মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কয়েকটি সমস্যার কথা দেখতে বলা হয়েছিল। রেশন কার্ড ও বার্ধক্য ভাতা না পাওয়ার মতো বিষয় ছিল সেখানে। দ্রুত সমাধান করা হয়েছে। তবে যাঁদের সমস্যা সমাধান হল, তাঁরা আদৌ দিদিকে বলোতে ফোন করেছিলেন কিনা, তা স্পষ্ট নয় প্রশাসনের কর্তাদের কাছে।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Didi Ke Bolo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy