মৃত বাবলু দত্ত
জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায়। শনিবার সন্ধ্যায় মারা গিয়েছেন বাবলু দত্ত (৫০) নামে এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লিতে। দিন কয়েক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন বাবলু। মঙ্গলবার অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
ছেলে সৌভিক বলেন, ‘‘হাসপাতালে বুধবার বাবার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে আমরা জানতে পারি, তাঁর ডেঙ্গি হয়েছে।’’ শনিবার দুপুরে বাবলুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকেরা কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। পথেই মারা যান বাবলু।
সৌভিক বলেন, ‘‘যদি দু’দিন আগেও অশোকনগর হাসপাতাল থেকে বাবাকে রেফার করা হত, তা হলে হয় তো বাবাকে বাঁচাতে পারতাম। শেষ মুহূর্তে রেফার করা হয়েছিল।’’
এই মৃত্যু ঘিরে এলাকার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, দুর্গাপুজোর পর থেকে পুর এলাকায় ডেঙ্গি প্রতিরোধে কার্যত কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। এলাকায় মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। কিন্তু তেল, ব্লিচিং, চুন ছড়ানো হচ্ছে না। চারদিক জঙ্গলে ভরা। নিকাশি নালায় জল জমে মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি। মালা জানা নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাড়িতে কলের চাতালে বসে বাসন মাজতে পারি না। মশার কামড়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়। দিন কাল যা পড়েছে, মশা কামড়ালেও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এই বুঝি ডেঙ্গি হল। জঙ্গল পরিষ্কার হয় না। দিদিকে বলো কর্মসূচিতে ফোন করেও জঙ্গল পরিষ্কার হয়নি।’’ মানুষের ক্ষোভ, একাধিকবার বলার পরে দু’এক দিন পুরকর্মীদের দেখা যায় মশা মারতে। তারপরে আবার একই হাল। নিকাশি নালার জল বের হওয়ার ব্যবস্থা নেই। নালায় আবর্জনা ভর্তি। অবাধে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। বাজার, মুদি দোকান, মিষ্টির দোকান সর্বত্র প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। মানুষও সচেতন নন। বাসিন্দারা জানালেন, দিনের বেলাতেও মশার উৎপাত রয়েছে। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে তাঁরা নিজেরা চুন, ব্লিচিং, মশা মারার তেল কিনে বাড়ির চারপাশে ছড়াচ্ছেন।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুজোর পর আর এলাকায় মশা মারার কাজ হয়নি। অথচ নতুন করে অনেক মানুষ জ্বর-ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরপ্রধানকে বলেছিলাম অন্য কোনও খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ডেঙ্গি প্রতিরোধে খরচ করা হোক। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’ যদিও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, মশা মারতে নিয়মিত প্রতিটি ওয়ার্ডে মশা মারার তেল, চুন ব্লিচিং, ছড়ানো হচ্ছে। অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করে রোজ দু’দফায় নিকাশি নালা সাফাই করা ও জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজ চলছে। পুরকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বরের খোঁজ নিচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করছেন।
পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার নিজে রোজ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গি সচেতনতার কাজ করছেন। প্রবোধ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি প্রতিরোধ করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। অনেক বাড়িতে গিয়ে দেখেছি বাড়ির মধ্যে জল জমে, আগাছায় ভরা। পুরসভার পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’’
চলতি বছরে হাবড়া-অশোকনগর এলাকায় জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছে সব থেকে বেশি। নিয়মিত ভাবে মানুষ মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ এখন অনেকটাই কমেছে। বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এখন অনেকটাই কমেছে। আরও শীত পড়লে ডেঙ্গি পুরোপুরি কমে যাবে। তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে মাথা যন্ত্রণা হবেই। তখন বাজার থেকে মাথা যন্ত্রণার ওষুধ খেলে বিপদ বাড়ে। কারণ, মাথা যন্ত্রণার ওষুধ খেলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। বহু মানুষ এ বিষয়ে সচেতন নন বলে জানান সুপারও।
মৃতের তালিকা
• বাবলু দত্ত (৫০), সারদাপল্লি
• জয়ন্ত পাল (৩০), দেবীনগর
• রিতা বালা (৪৬), বনবনিয়া
• অচিন্ত্য সাহা (৫৮), গুমা
• দিলীপ দাস (৩৯), দেবীনগর
• প্রিয়াঙ্কা সাহা (২০), ১০ নম্বর ওয়ার্ড
• পূর্ণিমা হালদার, নিচু কয়াডাঙা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy