Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

পাঁচ বছর ঝুলে থাকা মামলার নিষ্পত্তি পনেরো মিনিটেই

বছর ছাব্বিশ আগে ব্যাঙ্কঋণ নিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। শোধ করতে পারছিলেন না। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ডায়মন্ড হারবার আদালতে মামলা করেন। তারপর থেকে আর ওই মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বছরের পর বছর শুধু তারিখ মিলেছে। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারে বসা লোক আদালতের মাধ্যমে সেই মামলার রায় হল।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৭:৩২
Share: Save:

বছর ছাব্বিশ আগে ব্যাঙ্কঋণ নিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। শোধ করতে পারছিলেন না। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ডায়মন্ড হারবার আদালতে মামলা করেন। তারপর থেকে আর ওই মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি। বছরের পর বছর শুধু তারিখ মিলেছে। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি। সম্প্রতি ডায়মন্ড হারবারে বসা লোক আদালতের মাধ্যমে সেই মামলার রায় হল।

গোটা দেশেই এখন বিচারপতির অভাব। মামলার পাহাড় জমা হয় আদালতে। বছরের বছর ধরে তারিখের পর তারিখ পেতে পেতে শুধু গাঁটগচ্চাই হয়। কম গুরুত্বের কিছু দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাই চালু হয়েছে লোক আদালত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে সম্প্রতি একদিনের লোক আদালতে অনেকগুলি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।

দেওয়ানি আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের পরিচালনায় ওই লোক আদালত বসে। বিচারক শ্যামপ্রকাশ রজক বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে অনেক মামলা জমে রয়েছে। সেগুলির নিষ্পত্তি করার জন্যই এই আদালতের আয়োজন করা হয়েছে।’’ কেউ যদি নতুন করে কোনও মামলা করতে চান, এই আদালতে তা-ও দেখা হবে বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি ওই লোক আদালতে হাজির ছিলেন দেওয়ানি আদালতের আইনজীবী শাহাজান জমাদার। তিনি জানান, বিভিন্ন এলাকার উপভোক্তারা তাঁদের নানা বিষয়ে মামলার নিষ্পত্তির জন্য মহকুমা আইনি সহায়তা কমিটির কাছে মাসখানেক আগে লোক আদালত বসানোর আবেদন করেছিলেন। ৭২১ জন আবেদনকারী ছিলেন বলে তিনি জানান। কিন্তু প্রবল গরম ও জামাইষষ্ঠীর অনুষ্ঠান থাকায় অনেকেই অবশ্য হাজির হতে পারেননি। তবে ওই দিন যাঁরা এসেছেন, তাঁদের দু’পক্ষকে নিয়ে বিচারক মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলার সমাধান করেছেন।

নতুন করে অনেকে মামলাও করেছেন লোক আদালতে। যেমন, ফলতার বঙ্গনগর গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁচিশের এক বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে রেশন কার্ড ফিরে পেতে চান। সে কারণে বিচারকের কাছে তিনি ওই দিন আর্জি জানান। বছর পাঁচেক আগে ডায়মন্ড হারবারের নিউ টাউন এলাকার এক ওষুধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরেই শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় রেশন কার্ডটি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। বিয়ের কিছু দিন পরে তিনি জানতে পারেন তাঁর স্বামীর আরও এক স্ত্রী রয়েছে। তারপর থেকে ওই দম্পতির মধ্যে প্রায়শই অশান্তি হতো। বাধ্য হয়ে বছর দেড়েক আগে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে আসেন ওই বধূ। বিয়ের যৌতুক ফিরে পেতে আগেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। সেই মামলা চলছে। কিন্তু রেশন কার্ডটি দ্রুত দরকার ওই তরুণীর। সে জন্যই লোক আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানান।

আদালতে হাজির হয়েছিলেন মথুরাপুরের সিমেদ্ধার গ্রামের বছর চল্লিশের মহারাজা তাঁতি। পেশায় দিনমজুর মহারাজাবাবুর বাড়িতে হঠাৎ আদালতের চিঠি আসে। সেখানে বলা হয়, বছর ছাব্বিশ আগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে মহারাজাবাবু ৬,৬১০ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এত দিনে সুদ-আসলে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। লোক আদালতে হাজিরা দিয়ে তিন হাজার টাকায় মামলাটির রফা হয়েছে। যদিও সে দিন মাত্র ৫০ টাকা দেন মহারাজা। বাকি টাকা পরে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এক বিচারপ্রার্থীর কথায়, ‘‘আমার তো পাঁচ বছর ধরে নিম্ন আদালতে মামলা চলছিল। জানতাম, ঠিকঠাক ভাবে দু’পক্ষের কথা শুনলে বিচারক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সে জন্যই লোক আদালতের দ্বারস্থ হই। এখানে এসে পনেরো মিনিটেই সমাধান হয়ে গেল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Adalat Court Settlement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy