শেষ-যাত্রায়: পাথরপ্রতিমার গ্রামে জ্বলছে তিনটি চিতা। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়ি ফিরলেন ওঁরা। তবে কফিনবন্দি হয়ে।
শুক্রবার মাঝরাতে পাথরপ্রতিমার লক্ষ্মীজনার্দনপুরের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ফেরে ভুঁইয়া পরিবারের তিন সদস্যের দেহ। প্রচুর মানুষ অত রাতেও হাজির ছিলেন বাড়িতে। ভোরের দিকে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
গৃহকর্তা মদনমোহন ভুঁইয়া এই গ্রামেরই সন্তান। তবে কর্মসূত্রে থাকতেন কলকাতার গড়িয়ায়। বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। মদনমোদন প্রায়ই আসতেন গ্রামের বাড়িতে। সঙ্গে থাকতেন স্ত্রী-ছেলে। উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন মদনমোহন ভুঁইয়া (৬১), তাঁর স্ত্রী ঝুমুর (৫৯) ও ছেলে নীলেশ (২৩)।
দেহ আসার পরে সে দৃশ্য দেখে কাঁদতে কাঁদতে মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন মদনমোহনের মা অনিমা। বাড়ির আশপাশ থেকেও ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ।
শনিবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বড় ছেলে মদনমোহনের ফ্রেম-বন্দি ছবি হাতে নিয়ে বাড়ির বারান্দায় বসে আছেন অনিমা। থেকে থেকে কাঁদে উঠছেন। বললেন, ‘‘আর কোনওদিন ওদের সঙ্গে দেখা হবে না। কখনও আর আমাকে মা বলে ডাকবে না।’’
পরিবার সূত্রে জানা গেল, দিন কয়েক আগে গড়িয়ার বাড়ি থেকে মদনমোহন স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডের টিহরী গাড়োয়ালে গিয়েছিলেন। সেখানেই গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান বাংলার পাঁচজন। এঁদের মধ্যেই ছিলেন মদনমোহনরা।
দাদা-বৌদি, ভাইপোর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বুধবার রাতে রওনা দেন মদনমোহনের ভাই মানস। সমস্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মিটিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতায় পৌঁছয় দেহ। সন্ধ্যায় কলকাতার শ্রীনগরে পৌঁছয় দেহ। অনিমার ইচ্ছা অনুযায়ী পরে দেহ আনা হয় পাথরপ্রতিমার গ্রামেও। ভোরের দিকে পাশাপাশি জ্বলে ওঠে তিনটি চিতা। কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামের বহু মানুষ।
মদনমোহন পেশায় ছিলেন লাইব্রেরিয়ান। স্ত্রী ঝুমুর নিউ ব্যারাকপুরে একটি কলেজের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন। একমাত্র ছেলে নীলেশ বিমান চালক হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছিলেন রায়বরেলিতে। গরমের ছুটিতে সপরিবার ছুটি কাটানোর জন্য বেরিয়েছিলেন।
মদনমোহনের ছোট ভাই মানস বলেন, ‘‘দাদা যখন গ্রামের বাড়িতে আসতেন, তাঁর বাল্যকালের বন্ধু এবং পাশের বাড়ির পরিচিতদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। পশুপাখির ছবি তুলতেন গ্রামের বিভিন্ন এলাকার ঘুরে ঘুরে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy