শহর কলকাতা লাগোয়া বারাসত কিংবা সোনারপুরের জমি-বাড়ির দরকে টেক্কা দিচ্ছে বসিরহাট।
জমির দালালেরা বিলক্ষণ বুঝে নিয়েছে, হাল আমলে টাকা আসে মাটি ফুঁড়েই। বসিরহাটে এই ক’দিন আগেও যে জমির দাম ছিল কাঠা প্রতি ৩-৪ লক্ষ টাকা, শহর ও লাগোয়া এলাকায় সেই জমিরই দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮-১০ লক্ষ টাকায়! আবার জায়গা বুঝে কোথাও কোথাও সেই পরিমাণ জমিই বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ লক্ষতে। ৭০০-১০০০ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে বিশ-তিরিশ লাখে! দোকান ঘরের দাম স্কোয়ার ফুট-পিছু ৮-১০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।
চোখ কপালে তোলা টাকার এই অঙ্কটাই জমির দালালদের অতি সক্রিয় করে তুলেছে। দালালির হাত ধরে নানা অপরাধ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে একের পর খুন-জখমের ঘটনা ঘটেছে বসিরহাটে। তা ছাড়া, জমি দখলের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি, নানা ভাবে উত্যক্ত করার ‘প্রথাগত’ পদ্ধতি তো আছেই। জানা যাচ্ছে, জমির কারবারিরা পকেটে রিভলভার গুঁজে প্রথমে যাচ্ছে জমির মালিকের বাড়ি। ইনিয়ে-বিনিয়ে ভাল কথায় বোঝাচ্ছে, জমি বেচার কথা। মালিক রাজি না হলেই ধীরে ধীরে বাড়ছে চাপ। এক সময়ে রিভলভারও বেরিয়ে পড়ছে পকেট থেকে।
জমির কারবারের বেলাগাম মুনাফার ছাপ চোখে পড়়ছে বহু ছা-পোষা মানুষের জীবনে। এই ক’দিন আগেও যে ছিল সামান্য গাড়ির চালক, আজ বাড়ি-গাড়ি হাঁকিয়ে তার জাঁক দেখলে থ হয়ে যেতে হবে। ক’দিন আগেও সাইকেলে ঘুরতে দেখা যেত যে যুবককে, ইদানীং তারই নতুন ঝাঁ চকচকে বাইক ছুটছে শহরের রাস্তায়।
দিন কয়েক আগেই কালীবাড়ি পাড়ায় রত্ন ব্যবসায়ী শুভ্রজিৎ সাধুর গলায় দড়ি দেওয়া দেহ মিলেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শুভ্রজিৎ একাই থাকতেন। সেই সুযোগে তাঁর জমি হস্তগত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল এলাকারই কিছু লোক। শুভজিৎবাবু খুন হয়েছেন সেই কারণেই।
বসিরহাটের দালালপাড়ার বাসিন্দা অশীতিপর শিক্ষিকা লতিকা দে, মাদ্রাসার সামনে ইটিন্ডা রোডের বাসিন্দা গৃহশিক্ষিকা জয়শ্রী দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁদের মালিকানাধীন কয়েক কাঠা জমিই ওই দুই বৃদ্ধার প্রাণনাশের কারণ হয়ে উঠেছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই নিকটাত্মীয়েরাই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকেও। দু’টি ক্ষেত্রেই বৃদ্ধাদের কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে মূল অভিযুক্তদের। জানা যায়, লক্ষাধিক টাকা বরাত দেওয়া দেওয়া হয়েছিল দুষ্কৃতীদের। বৃদ্ধাদের সরিয়ে দিতে পারলেই ওয়ারিশারহীন জমির দখল নেওয়া সহজ হবে বলে মনে করেছিল অপরাধীরা।
জমি সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ে দিন কয়েক আগে ধরা পড়েছে এক গাড়ি ব্যবসায়ী। সামান্য তিন শতক জমির লোভে এক যুবককে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
পুলিশ জানাচ্ছে, যে সব জমির মালিক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একা থাকেন, তাঁরাই সহজ ‘টার্গেট’ হয়ে উঠছেন জমি মাফিয়াদের কাছে। এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে বসিরহাট শহরে যে ভাবে লাগাম ছাড়া জমির দাম বেড়েছে, তাতে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে, সেখানেই হাত বাড়াচ্ছে জমি মাফিয়ারা। অল্প দামে জমি না পেলে প্রথমে ভয় দেখানো হচ্ছে। পরে দুষ্কৃতী লাগিয়ে খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে।’’ পুলিশের হিসেব বলছে, গত চার-পাঁচ বছরে জমির দখলকে কেন্দ্র করে ১২-১৪ জন খুন হয়েছেন বসিরহাটে। টাউনহল এলাকায় একটি দোতলা বাড়িতে ভূতের উপদ্রব কি আসলে জমি মাফিয়াদের কাজ, তারও তদন্ত করছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, জমির কাগজপত্রে গোলমাল থাকলে মাফিয়াদের কাছে তা বেশি লোভনীয়। ওই জমি তুলনায় অল্প দামে তারা কিনে নেয় মালিকের কাছ থেকে। তারপর নানা ফন্দি-ফিকিরে সেই জমিই কয়েক গুণ চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায় প্রমোটারের কাছে। সেই জমিতে হু হু করে ওঠে ফ্ল্যাট, দোকান।
কিন্তু কেন কলকাতা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে বসিরহাটে জমির এ হেন চাহিদা? কেনই বা বাড়ছে জমির দাম?
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy