Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sundarbans

Sundarbans-Bangladesh: ষোলোজন অতিথির সেবা করতে গিয়ে নাজেহাল জনাব

ক্যানিং ২ ব্লকের মৌখালি গ্রামের মৎস্যজীবী জনাব আলি মোল্লা সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরেন।

আশ্রয়: বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা। নিজস্ব চিত্র

আশ্রয়: বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২২ ০৮:১৫
Share: Save:

ট্রলার ডুবির পরে নদীতে ভাসতে থাকা বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের উদ্ধার করেছিলেন ভারতীয় মৎস্যজীবীরা। ওই সমস্ত বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন গরিব পরিবারগুলি। এ দিকে, আইনি জটিলতায় এখনও দেশে ফিরতে পারছেন না বাংলাদেশিরা।

ক্যানিং ২ ব্লকের মৌখালি গ্রামের মৎস্যজীবী জনাব আলি মোল্লা সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরেন। একার আয়ে স্ত্রী ও চার মেয়ের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খান তিনি। ট্রলার ডুবির পরে ১৬ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী তাঁর তাঁর বাড়িতে অতিথি হিসেবে উঠেছেন। সরকারি সাহায্য না পেলে কী ভাবে এতজন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেবেন, তা নিয়ে চিন্তিত জনাব।

গত শনিবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা। বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি ট্রলার সমুদ্রে তলিয়ে যায়। ‘এফভি সাবিরা’ নামে একটি ট্রলার মাঝসমুদ্রে ডুবে যায়। ১১ জন মৎস্যজীবী কোনওমতে ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়েন। প্রায় ১৩ ঘণ্টা পরে তালপট্টির জঙ্গলে আশ্রয় নেন তাঁরা।

আর একটি ট্রলারের ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় জলে ভাসতে থাকে। রবিবার ভারতীয় জলসীমার মধ্যে তালপট্টির জঙ্গলের কাছে মাছ ধরছিলেন জনাব-সহ কয়েকজন। বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা তাঁদের দেখতে পান। জনাবরা উদ্ধার করে সকলকে জীবনতলায় আনেন। ১৬ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেন জনাব।

গত পাঁচ দিন ধরে সেখানেই থাকা-খাওয়ার আয়োজন হচ্ছে তাঁদের। এ দিকে, জনাবেরই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা। জনাব বলেন, ‘‘এতজন অতিথির জন্য দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে গিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করাটা জরুরি।’’

এ বিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয়কৃষ্ণ হালদার বলেন, ‘‘শুধু জীবনতলা নয়, কুলতলি, কাকদ্বীপ-সহ অন্যান্য জায়গাতেও উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য সব রকম সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে।’’ কিছু আইনি জটিলতায় বাংলাদেশিরা এখনও ফিরতে পারছেন না বলে জানালেন তিনি। বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে ভারতে আটকে পড়া ৯৩ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীর তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে তাঁদের যাতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, সে জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও জানানো হয়েছে।

ক্যানিং ২ বিডিও প্রণব মণ্ডল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সমস্ত মৎস্যজীবীদের জন্য চাল, ডাল, আনাজ পাঠিয়েছি। এ ছাড়াও তাঁদের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ক্যানিং ২ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্যের কর্মাধ্যক্ষ আবুল জাফর মির বলেন, ‘‘ওই মৎস্যজীবীরা আমাদের ব্লক এলাকার অতিথি। তাই তাঁদের জন্য জামাকাপড় থেকে শুরু করে প্রশাসনের তরফে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, আমি নিজে প্রতিদিন ওই সমস্ত মৎস্যজীবীর সঙ্গে তাঁদের পরিবারের ভিডিয়ো কলিংয়ে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।’’

জনাবের অবশ্য দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও সহযোগিতা পাননি।

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Bangladesh Fishermen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE