ঘনিয়ে এসেছে মেঘ, ফের দুর্যোগের আশঙ্কা। ক্যানিংয়ের মাতলা নদীর চরে শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন প্রসেনজিৎ সাহা।
তিন বছর আগে এমনই এক মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবনের ঘোড়ামারা দ্বীপ, মৌসুনি দ্বীপ, গোবর্ধনপুর, সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, গোসাবা সহ বহু এলাকা। এ বার চোখ রাঙাছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সুন্দরবনের উপকূলে কি ফের আছড়ে পড়তে চলেছে প্রকৃতির রোষ, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেই সঙ্গে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা জল্পনা। এ সবের মধ্যে রবি ও সোমবার দু’দিনই দুই ২৪ পরগনায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। কলকাতা সহ চার জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২৫ মে বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপ তৈরি হবে। ২৬ মে সকালে তা পরিণত হবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিজ্ঞানমন্ত্রক সূত্রের খবর, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উপকূল এলাকায় রবিবার মধ্যরাতে ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে আছড়ে পড়তে চলেছে। শুক্রবার ভোর থেকে উত্তাল হবে সমুদ্র। এই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবীদের স্থলভাগে ফিরে আসতে বলা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় রেমালের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। জেলায় অতিরিক্ত বজ্রপাতের সতর্কতাও জারি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। শুক্রবার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি দল পৌঁছেছে জেলায়। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে বিডিওদের নিয়ে আগাম প্রস্তুতি সংক্রান্ত জরুরি বৈঠক করেছেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। শুক্রবার বিকেলে প্রতিটি ব্লকের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ-খবর নেন তিনি। মৎস্যজীবী সংগঠনগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলার তিনটি বাহিনী রয়েছে কাকদ্বীপ, সাগর এবং গোসাবায়। উপকূল এলাকার প্রতিটি ব্লক এবং পঞ্চায়েত অফিসে কন্ট্রোলরুম খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ঘোড়ামারা সহ অন্যান্য দ্বীপ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুর্বল বাঁধগুলির উপরে নজর দেওয়ার জন্য। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ দফতর সহ অন্যান্য দফতরকে। বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় ভয়ে ভয়ে আছেন উপকূলবর্তী এলাকার অসংখ্য মানুষ।
কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মহকুমা এলাকার সমস্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া, বকখালি এবং গঙ্গাসাগর সমুদ্রতটে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমস্ত ফ্লাড শেল্টার প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘কোনও মৎস্যজীবী সমুদ্রে নেই, তবুও আমরা সকলকে সতর্ক করে দিয়েছি।’’
জেলাশাসক বলেন, ‘‘দুর্যোগের জন্য জেলা সহ ব্লকগুলিতে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এ ছাড়া, ঘোড়ামারা সহ অন্যান্য জায়গা থেকে বাসিন্দাদের শনিবার বিকেলের মধ্যে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হবে। রবিবার উপকূল এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা আছে।’’ সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার কথায়, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিছে। বিশেষ করে নদী বাঁধগুলির উপরে বিশেষ নজর দেওয়া হছে, কিছু হলেই যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ ছাড়া, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত করা হছে।’’
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূল এলাকার ফ্লাড শেল্টারগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে দ্বীপ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে আনা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy