Advertisement
E-Paper

বজ্রআঁটুনির মাঝে উধাও আবেগ

নো-ম্যানস ল্যান্ডে রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বারদের শহিদ বেদিতে মাল্যদান হয়েছে। দু’দেশের অতিথিদের মধ্যে মিষ্টি ও ফুলের স্তবক বিনিময়ের দৃ্শ্য চোখে পড়ে।

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে পেট্রাপোলে নো ম্যানস ল্যান্ডে ঢুকতে পারলেন না অনেকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিরাপত্তার কড়াকড়িতে পেট্রাপোলে নো ম্যানস ল্যান্ডে ঢুকতে পারলেন না অনেকে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৪
Share
Save

ক্রমশই বাড়ছে নিরাপত্তার নিগড়। সুযোগ কমছে আবেগ বিনিময়ের।

বুধবার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পেট্রাপোল সীমান্তে অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখে অনেকেরই মুখে শোনা গেল এই আক্ষেপ।

নো-ম্যানস ল্যান্ডে রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বারদের শহিদ বেদিতে মাল্যদান হয়েছে। দু’দেশের অতিথিদের মধ্যে মিষ্টি ও ফুলের স্তবক বিনিময়ের দৃ্শ্য চোখে পড়ে। একে অন্যকে আলিঙ্গনও ছিল। তবে সবই যেন কিছুটা নিয়মমাফিক, বলছেন ভাষাদিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অনেকেই।

বনগাঁর বাসিন্দা কবি পার্থসারথি দে-র কথায়, ‘‘এই জায়গা আগে ভারত-বাংলাদেশের মিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠতে দেখেছি। এখন সবই যেন করতে হয়, তাই করা।’’ বনগাঁ শহরে প্রবীণ বাসিন্দা, গল্পকার দেবাশিস রায়চৌধুরী এখন আর এই দিনটিতে পেট্রাপোলে যান না। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময়ে মানুষকে আবেগের বন্যায় ভেসে যেতে দেখেছি এখানে অনুষ্ঠানে এসে। দেশের প্রতি, বাংলা ভাষার প্রতি এ ছিল ভালবাসা দেখানোর দিন। এখন সেই উত্তাপটা যেন অনেক কম। সে কারণে আর যাই না। "

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি?

বিএসএফ-পুলিশের কড়া নিরাপত্তা তার একটা কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। রাজনৈতিক চরিত্রদের প্রাধান্য ইদানীং চোখে পড়ার মতো। সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ যেন কম। সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকার, কবিদের আনাগোনা বিশেষ চোখে পড়ে না। সব মিলিয়ে অনেকের কাছেই অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার ভাষা দিবসের উদযাপন ছিল ম্রিয়মান। এরই মাঝে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন অবশ্য দাবি তুলেছেন, দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত ভিসামুক্ত করে দেওয়া হোক। এই দাবি দু’দেশের বহু মানুষের অনেক দিনেরই। তাতে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বাড়বে বলে আশা করেন অনেকে। আবার অনুপ্রবেশের সমস্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কাও আছে।

বুধবার সকাল থেকেই দু’দেশের ভাষাপ্রেমী বহু মানুষ বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন। কয়েক বছর হল নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের গেট আর দু’দেশের মানুষের জন্য কিছুক্ষণের জন্যও খুলে দেওয়া হয় না। যৌথ মঞ্চ থেকে এক সঙ্গে দু’দেশের শিল্পীরা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন না। আগে নো-ম্যানস ল্যান্ডে যৌথ মঞ্চ হত। দু’দেশের মানুষ এক সঙ্গে বসে অনুষ্ঠান দেখতেন। এ সব বন্ধ হলেও নো-ম্যানস ল্যান্ডে কিছু মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হত। এ বার সে সবও বন্ধ ছিল। সাংবাদিকদেরও নো-ম্যানস ল্যান্ডের এক পাশে দাঁড়াতে হয়েছিল। কিছুক্ষণ থাকার পরে বিএসএফ জওয়ানেরা বাঁশি বাজিয়ে এলাকা ফাঁকা করে দেন। দূরদূরান্ত থেকে দু’দেশের বহু মানুষ সকাল থেকে সীমান্তে জড়ো হয়েছিলেন৷ তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই নো-ম্যানস ল্যান্ডের কাছেও আসতে পারেননি৷

দু’দেশের অতিথিরা সীমান্ত পেরোতে না পারলেও নো-ম্যানস ল্যান্ডের ভাষা শহিদ বেদিতে মাল্যদান করা হয়। এ দেশের অতিথিদের মধ্যে ছিলেন বিধানসভার মুখ্য সচেতন নির্মল ঘোষ, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। ও পার বাংলার তরফে ছিলেন বেনাপোলের মেয়র নাসিরউদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামি লীগের জাতীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিলউদ্দিন, সারশা উপজেলার চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু প্রমুখ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

International Mother Language Day India Bangladesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}