প্রতীকী ছবি।
লকডাউন-এর আগল কিছুটা আলগা হতেই উঁকি মেরেছিল সমস্যাটি। তারপর সময় যত গড়িয়েছে, ততই প্রকট হয়েছে সেই সমস্যা।
ধাপে ধাপে লকডাউন প্রত্যাহার-পর্ব শুরু হওয়ার পরে প্রেমে পড়া নাবালক-নাবালিকাদের ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে গ্রামীণ দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, যা দেখে চিন্তিত রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনও। তাই অভিভাবকদের প্রতি কমিশনের পরামর্শ— ছেলে বা মেয়ের উপরে নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা জোর করে চাপিয়ে না-দিয়ে তাদের প্রতি সহমর্মী হোন। বন্ধু হয়ে উঠুন সন্তানের। কারণ, এ ছাড়া ওই সমস্যা মেটানোর কোনও উপায় দৃশ্যত নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা চাইল্ডলাইন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, লকডাউন চলাকালীন তাদের কাছে কিশোর-কিশোরীদের বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার যতগুলি ঘটনার রিপোর্ট এসেছিল, লকডাউন পরবর্তী সময়ে গত মাস পর্যন্ত সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, নভেম্বরে প্রেমের টানে নাবালক-নাবালিকার ঘর ছেড়ে পালানোর ১০ টি ঘটনা তাদের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। অক্টোবরে সেই সংখ্যা ছিল ১২। অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ওই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে তিন ও সাত। এপ্রিল মাসে (যখন লকডাউন চলছে) ওই ধরনের মাত্র দু’টি ঘটনার রিপোর্ট এসেছিল জেলা চাইল্ডলাইনের কাছে। জুন এবং জুলাই মিলিয়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩।
এই পরিসংখ্যান দেখেই পরিষ্কার, লকডাউন প্রত্যাহারের পরে সময় যত এগোচ্ছে, ততই বেড়েছে প্রেমের টানে কিশোর-কিশোরীদের ঘর ছাড়ার প্রবণতা। এই সময়কালে ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে এমন অনেককে উদ্ধারও করা হয়েছে। তারা চাইল্ডলাইন কর্তাদের জানিয়েছেন, লকডাউন চলায় একে অপরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ তারা পায়নি। পরিবারও তাদের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি। সেই কারণে লকডাউন-এর বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হতেই তারা ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘যৌবনের সন্ধিক্ষণে কিশোর-কিশোরীরা প্রেমে পড়ে। এটা অপরাধ নয়। এটাই স্বাভাবিক। বাচ্চাদের মনের চাহিদা বুঝতে হবে বাবা-মাকে। তাদের বোঝাতে হবে, প্রেম করছ কর, কিন্তু পালিয়ে যেও না। কিন্তু অভিভাবকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অধিক মাত্রায় রক্ষণশীল হন। তার ফলে এই সব হয়।’’
এই ধরনের ঘটনা উদ্বেগ ছড়িয়েছে অভিভাবকদের মধ্যে। পাশাপাশি মাথা তুলেছে আর এক সমস্যা। জেলা চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর দেবারতি সরকার জানান, উদ্ধার হওয়া অনেক কিশোরীকেই বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে, তাদের রাখতে হচ্ছে আবাসিক হোমে। এতে ওদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়বে ভবিষ্যতে। তিনি বলেন, ‘‘ওদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা অভিভাবকদের কাছে বারবার আর্জি জানাচ্ছি। তাঁদের বোঝাতে চাইছি, এই বয়সে আবেগপ্রবণ হয়ে ওই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে অনেক কিশোর-কিশোরী। এটা যে কোনও অপরাধ নয়, তা অভিভাবকদের বুঝতে হবে।’’
চাইল্ডলাইন সূত্রে খবর, বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল, এমন ১২ জন কিশোর-কিশোরীকে উদ্ধার করা গিয়েছে অক্টোবরে। তাদের পাঁচ জনকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে। পরিবার গ্রহণ না করায় বাকি সাত জনকে হোমে পাঠাতে হয়েছিল। নভেম্বরের চিত্রটাও প্রায় একই।
অনন্যা বলেন, ‘‘এটাও দেখেছি যে, মেয়েরা প্রেম করছে বুঝতে পারলেই, অভিভাবকেরা তাঁদের পছন্দের ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখনই মেয়েটি পালিয়ে যায়। তাই মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। এটা করতে পারলেই ওই প্রবণতা কমবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy