গোপনে বিকোচ্ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
পুলিশি ধরপাকড়, নজরদারি চলছে। তারপরেও উত্তর ২৪ পরগনায় কি আদৌ বন্ধ হয়েছে শব্দবাজি বিক্রি?
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বৃহস্পতিবার ঢুঁ মারা গেল গোপালনগরের কাছারি বাজারে। কোথায় বাজি মিলবে, জানতে চাওয়ায় স্পষ্ট উত্তর মিলল না। তবে একজন বললেন, “একটু খুঁজে দেখুন। প্রকাশ্যে কিছু বিক্রিবাট্টা হচ্ছে না। তবে পেয়ে যাবেন।”
ঘোরাঘুরি করতে করতে একটি দোকানের সামনে দেখা গেল, তারাবাজি বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলাম, “শব্দবাজি আছে? থাকলে কিনব।” দোকানের কর্মচারী এক ক্রেতাকে মালপত্র দিচ্ছিলেন। শব্দবাজির কথা শুনে থমকালেন। কাছে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভাল করে দেখলেন। প্রশ্ন উড়ে এল, “বাড়ি কোথায়?”
বাড়ি জেনে কী হবে? উত্তরে খুশি হলেন না দোকানি। সরাসরি প্রশ্ন এল, “কোন থানায় আছেন?”
পুলিশের লোক নই, বোঝানো হল দু’চার কথায়। এ বার দোকানি বললেন, “আসলে পুলিশকর্মীরাও সাধারণ পোশাকে এসে শব্দবাজি কিনে নিয়ে যান। পরে আবার আমাদের দোকানেই তল্লাশি চালান!” সুখ-দুঃখের কথা হতে হতে ভদ্রলোক এ বার অনেকটা আশ্বস্ত। দোকানের ভিতর থেকে বের করে আনলেন ১০০টি আলুবোম। দাম, ১১০ টাকা। আশ্বাস দিয়ে বললেন, “একটাও নষ্ট হবে না। সব ফাটবে।’’ একগাল হেসে আবার আসার আমন্ত্রণও জানিয়ে রাখলেন।
কালীপুজোর আগে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় লাগাতার পুলিশি অভিযানের ফলে প্রকাশ্যে শব্দবাজি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন বেশিরভাগ দোকানিরা। কয়েকদিন ধরে বনগাঁ, বারাসত, বসিরহাট, ব্যারাকপুর মহকুমায় অভিযান চলছে। বাজি আটক করে তা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। বাজি কারবারিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশি অভিযানের মধ্যেও দোকানিরা চোরাগোপ্তা শব্দবাজি বিক্রি করছেন, বৃহস্পতিবার সে কথাই চোখের সামনে ঘটতে দেখা গেল।
হাবড়া শহরে লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজোয় শব্দবাজির তাণ্ডব চলে। পুলিশ এ বার আগে থেকে তল্লাশি চালানোয় লক্ষ্মীপুজোয় তেমন শব্দবাজির দাপট ছিল না। ইতিমধ্যেই হাবড়া থানার পুলিশ ১ কুইন্টালের বেশি শব্দবাজি আটক করে নষ্ট করেছে। গোবরডাঙা, অশোকনগর-সহ বারাসত পুলিশ জেলার প্রতিটি থানাতেই শব্দবাজির বিরুদ্ধে তল্লাশি চলছে। বসিরহাট থানায় পুলিশ বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে ৬ বস্তা শব্দবাজি আটক করেছে। এক দোকানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাগদা থানার পুলিশও কয়েক কেজি শব্দবাজি আটক করেছে। এক কারবারি গ্রেফতার হয়েছে। বনগাঁ থানার পুলিশ ২০ কেজি শব্দবাজি আটক করেছে।
বনগাঁ, বারাসত ও বসিরহাট পুলিশ জেলার কর্তারা জানিয়েছেন, শব্দবাজির বিরুদ্ধে অভিযান লাগাতার চলবে। গোপনে শব্দবাজি বিক্রির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে খবর আছে পুলিশের কাছেও। সেই মতো তল্লাশি চলছে।
করোনা পরিস্থিতিতে শব্দবাজি বা বাজি ফাটলে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। হাবড়ার চিকিৎসক দীপক কুণ্ডু বলেন, “শব্দবাজি ফাটানোর ফলে বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এ বার তেমনটা হলে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় করোনার জীবাণু। বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে গেলে হাঁচি দিলে জীবাণু বেশি দূর যেতে পারবে না। পরিবেশে করোনার জীবাণু দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকবে।” শব্দবাজির আওয়াজে কানের ক্ষতি হতে পারে বলেও জানান তিনি। কানে কম শোনা বা ভবিষ্যতে একবারে না শোনার আশঙ্কা থাকে। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, হার্টের সমস্যা আছে বা দুঃশ্চিন্তায় ভোগেন, তাঁদের পক্ষে শব্দের তাণ্ডব খুবই বিপজ্জনক।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে এ বার বাজি নিয়ে নতুন নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ‘সবুজ বাজি’ ফাটানোর কথা বলা হয়েছে। তবে এই সবুজ বাজি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা সংশয়ে। কারণ, ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ বা ‘সবুজ বাজি’ বস্তুটা কী, সে সম্পর্কে অনেকেকেই স্পষ্ট ধারণা নেই। এ দিন জেলার একাধিক বাজির দোকানে সবুজ বাজির খোঁজ করায় আকাশ থেকে পড়েছেন বিক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy