Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ওষুধের দোকানের পিছনে চলছে বেআইনি নার্সিংহোম

কোথাও ওষুধের দোকানের আড়ালে চলছে নার্সিংহোম। কোথাও অস্ত্রোপচার করছেন স্বয়ং হাতুড়ে।

ক্যানিঙের সাতমুখিতে নার্সিংহোম সিল করা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

ক্যানিঙের সাতমুখিতে নার্সিংহোম সিল করা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

কোথাও ওষুধের দোকানের আড়ালে চলছে নার্সিংহোম। কোথাও অস্ত্রোপচার করছেন স্বয়ং হাতুড়ে।

উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় নার্সিংহোম থেকে শিশু পাচারের ঘটনায় কয়েকটি নার্সিংহোমের নাম জড়ানোর পরেই জেলার নার্সিংহোমগুলিতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর এবং জেলা প্রশাসন। শুক্রবার বাসন্তী ব্লকের কয়েকটি নার্সিংহোম পরিদর্শন করে সিল করে দেয় জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দল। শনিবার দিনভর পরিদর্শন চলল ক্যানিং ১ ব্লকের তালদি, সাতমুখো-সহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি নার্সিংহোমে। প্রায় প্রতিটি নার্সিংহোমেই দেখা গেল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। আলো-আঁধারি ঘুপচি ঘরে রাখা হয়েছে মা এবং শিশুকে।
এ দিনের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল সরকার, ক্যানিং ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রবীরকুমার হালদার, বিডিও কিংশুক চন্দ, ক্যানিং হাসপাতালের সুপার অর্ঘ্য চৌধুরী, ক্যানিং থানার ওসি আশিস দাস প্রমুখ। এ দিন তালদির ‘নাজাত নার্সিংহোমে’ গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট ঘরে রাখা রয়েছে শয্যা। নার্সিংহোমে ছিল না কোনও চিকিৎসক, আরএমও, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী। নার্সিংহোমের মালিক মহিউদ্দিন লস্কর দাবি করেন, ‘‘রোগীরা যে রকম সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন সেই রোগের চিকিৎসক আনা হয়।’’
খাতায় কলমে ওই নার্সিংহোমের স্বাস্থ্য দফতরের লাইসেন্স থাকলেও দমকল এবং পরিবেশ দফতরের কোনও অনুমতি নেই। ইঞ্জেকশনের সূচ, স্যালাইনের বোতল, রক্তমাখা গজ, তুলো নষ্ট করার জন্য কোনও ছাড়পত্রও নেই। ছিল না রোগীদের ভর্তি-ছুটি, প্রসব, অস্ত্রোপচারের কোনও নথি। উঠেছে অবৈধ গর্ভপাতের অভিযোগও।
যদিও পঞ্চায়েত থেকে ওই নার্সিংহোমকে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। বিডিও বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দলটি নার্সিংহোমটির সব নথি ‘সিজ’ করেছে।
এরপরে প্রতিনিধি দলটি যায় সাতমুখো বাজারের ‘আনোয়ারা নার্সিংহোমে।’ বাইরে রয়েছে ওই নার্সিংহোমের মালিক হাফিজুর রহমানের ওষুধের দোকান। সেই দোকানের লাইসেন্সের ভরসাতেই নার্সিংহোম চলছে। তবে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা নার্সিংহোমে যাওয়ার আগেই হাফিজুর পালিয়ে যায়। অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি অন্য ঘরে সরিয়ে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিনিধি দলটি নার্সিংহোমে যাওয়ার পরে তাঁদের মুখোমুখি হন হাফিজুরের স্ত্রী সানজিরা গাজি। তিনি আবার ক্যানিং ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য। তিনি দাবি করেন, তাঁদের নার্সিংহোম নেই। যদিও একের পর এক ঘর খোলার পরে দেখা যায় ভিতরে শয্যা, স্যালাইনের বোতল রয়েছে। নথি ঘেঁটে দেখা যায়, কয়েক আগেও সেখানে অস্ত্রোপচার হয়েছে। তখন ওই মহিলা স্বীকার করেন, ‘‘মাঝেমধ্যে এখানে কয়েকজন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে।’’ এরপরে ওই নার্সিংহোমটি সিল করে দেওয়া হয়। তবে ফার্মেসির লাইসেন্স থাকায় ওষুধের দোকানটি বন্ধ করা হয়নি।
ওই দলটি যায় স্থানীয় হাতুড়ে সমরেশ সর্দারের ক্লিনিকেও। তিনি দাঁতের চিকিৎসা করেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সমরেশ জানান, তাঁর কোনও ডাক্তারি ডিগ্রি নেই। ওই ক্লিনিকটিও সিল করা হয়। সাতমুখো বাজারেই ‘বীণা ফার্মেসি’ বলে একটি ওষুধের দোকানে ঢুকে দেখা যায়, দোকানের পিছনে দু’টি ঘরে কয়েকটি শয্যায় রোগী শুয়ে রয়েছেন। ওষুধের দোকানের মালিক মোহিনীমোহন সরকার তাঁদের দেখভালে ব্যস্ত। প্রতিনিধি দলের কাছে প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে না পারায় তাঁর নার্সিংহোম এবং ওষুধ দোকান সংলগ্ন ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা রোগীদের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে এ দিন বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং ক্লিনিকে অভিযান চলেছে। প্রয়োজনীয় নথি না পাওয়া যাওয়ায় সেগুলি সিল করা হয়েছে।’’
শনিবারই ডায়মন্ড হারবার মহকুমার একটি নার্সিংহোমে অভিযান হয়। এ দিন দুপুরে উস্তির মোড়ে ‘পারফেক্ট পলিক্লিনিক’ নামে নার্সিংহোমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আটক করা হয়েছে ওই ক্লিনিকের মালিক হাতুড়ে আলি হোসেন সর্দার নামে এক যুবককে। স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ডায়মন্ড হারবারের মহকুমা শাসকের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সভার পরে এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই পলি ক্লিনিকে যায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল। দলে ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, অতিরিক্ত স্বাস্থ্য আধিকারিক নন্দদুলাল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘ওই পলিক্লিনিকে কোনও বৈধ নথি ছিল না। তাই সেটি সিল করা হয়েছে।’’
ওই নার্সিংহোমে একজন মহিলা ভর্তি ছিলেন। কিন্তু ক’দিন আগে সন্তান প্রসব করলেও তাঁর সঙ্গে সদ্যোজাত ছিল না। প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা বিষয়টি জানতে চাইলে মহিলার স্বামী দাবি করেন, ‘‘আমাদের সন্তান জন্মের সময়ে মারা গিয়েছে।’’ ওই ক্লিনিকের আটক হওয়া মালিক আলি হোসেন সর্দারও একই দাবি করেছেন। ওই মহিলাকে স্থানীয় বাণেশ্বরপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
(সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর)

অন্য বিষয়গুলি:

Nursing home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy