Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
জমি অধিগ্রহণ হয়েছে, ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা
Hotel

বাঁধের জমিতে রমরমিয়ে চলছে হোটেল ব্যবসা

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর দাবি, জমি অধিগ্রহণের পরেও কেন কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা গেল না, তা জানাতে হবে  তাঁদের।

দখল: বেআইনি নির্মাণের ফলে গোসাবার পাখিরালয়ে এই বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছিল বলে অভিযোগ।

দখল: বেআইনি নির্মাণের ফলে গোসাবার পাখিরালয়ে এই বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছিল বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা 
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৭:৩৫
Share: Save:

গোমর নদীর তীরে পাখিরালয়ে কংক্রিটের নদী-বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল সাত বছর আগে। ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়েছিল জমির মালিকদের। তার পরে নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু কংক্রিটের বাঁধ এখনও হয়নি। গত ২৬ মে ইয়াসের তাণ্ডবে গোমরের বাঁধ ভেঙে ডুবেছিল পাখিরালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর দাবি, জমি অধিগ্রহণের পরেও কেন কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা গেল না, তা জানাতে হবে তাঁদের।

পাখিরালয়ে নদীর তীরে প্রচুর হোটেল এবং রিসর্ট রয়েছে। কংক্রিটের বাঁধ তৈরির জন্য ১০টি হোটেল ও রিসর্টের জমি চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে হোটেল মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেই জমি অধিগ্রহণও করা হয়। ওই এলাকা ঘুরে দেখা গিয়‌েছে, এখনও সেখানে বহাল তবিয়তে হোটেল ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

২০০৯-র মে মাসে সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল আয়লা। নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল বহু ঘরবাড়ি। ৭৭৮ কিলোমিটার নদী-বাঁধ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। তার পরে সিদ্ধান্ত হয়, সুন্দরবনে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার কংক্রিটের নদী-বাঁধ তৈরি করা হবে।

পাখিরালয়ের হোটেল ব্যবসায়ী নিখিল দাস বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী নদী-বাঁধের জন্য জমি দিয়েছি। সরকার যেদিন বলবে, সেদিনই আমরা জমি ছেড়ে দেব। সরকার এখনও জমি অধিগ্রহণ করেনি। তাই হোটেল ব্যবসা করছি।’’

ওই এলাকার বাসিন্দা তথা পর্যটন ব্যবসায়ী রামপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘স্থায়ী নদী-বাঁধ হল না। জমি অধিগ্রহণও হল না। হোটেল মালিকেরা
মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে গেলেন। প্রত্যেক বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাঁধ ভেঙে বানভাসি হচ্ছেন এলাকাবাসী।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে স্থায়ী নদী-বাঁধ হয়নি।

কেন বাঁধ নির্মাণ হয়নি, এ নিয়ে সেচ দফচরের কর্তারা কিছু জানাতে চাননি। উত্তর নেই পঞ্চায়েত সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছেও।

এ বিষয়ে সেচ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত গোসাবা ব্লকের আধিকারিক মিহির দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আরআইডিএফ’-এর অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ওই কাজ করতে পারব না। তবে, যেখানে সমস্যা আছে সেখানে বাঁশের পাইলিং করে বাঁধ মেরামতির কাজ করছি।’’

আরআইডিএফ-এর অনুমোদন কেন মেলেনি, কোথায় সেই প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে তা জানাতে পারেননি ওই আধিকারিক।

নদী-বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ যে দেওয়া হয়েছিল, তা স্বীকার করে নেন গোসাবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের অচিন্ত্য পাইক। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমরা বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা করব। এলাকার মানুষ চাইছেন, সুন্দরবনে কংক্রিটের নদী-বাঁধ নির্মাণ করা হোক। আমরা সেই দাবি মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

অন্য দিকে, প্রাক্তন সেচমন্ত্রী তথা আরএসপি নেতা সুভাষ নস্করের দাবি, ‘বর্তমান রাজ্য সরকার ওই প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারেনি। টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণের নামে কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। বাঁধ হয়নি। টাকা অপচয় হয়েছে।’’

তাঁর সংযোজন, ‘‘আয়লা পরবর্তী সময়ে সুন্দরবনে কংক্রিটের নদী-বাঁধ নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের কাছে অর্থ চেয়ে দরবার করেছিলাম। সেই সময় কেন্দ্র ৫,০৩২ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।’’

সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘আমি সবে মাত্র দফতরের দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়গুলি খোঁজ নিয়ে দেখব। সেই মতো ব্যবস্থা নেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hotel Dams
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy