এখানেই দাদাকে পুঁতে রেখেছিল দুই ভাই (ইনসেটে)। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
পাড়ার লোকজনের কাছে এসে দুই ভাই বলে, ‘‘আমাদের বাড়ির বারান্দাটা খুঁড়ে দেখো। দাদাকে খুন করে ওখানেই পুঁতে রেখেছি।’’
বছর ছয়েক পরে পাড়ায় হাজির হয়ে এমন কথা বলায় হকচকিয়ে যান সকলে। মানসিক ভাবে অসুস্থ নন দুই ভাই। বলার ধরন দেখেও অবিশ্বাস করার কারণ ছিল না। পাড়ার লোকজন খবর দেন পুলিশকে। মাটির দাওয়া খোঁড়াখুঁড়ি করতেই বেরিয়ে আসে প্লাস্টিক জড়ানো কঙ্কাল। পুলিশ গ্রেফতার করেছে দুই ভাই অপু ও তপু শীলকে। দেহটি তাঁদের দাদা নিতু শীলের বলে দাবি দুই ভাইয়ের। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় ফরেন্সিকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের কাউগাছি আদর্শপল্লি এলাকার ঘটনা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সাউথ) অজয় ঠাকুর বলেন, “ওদের জেরা করে পুরো ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।’’
পুলিশের কাছে বছর আঠাশের যুবক অপু দাবি করেছে, ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর দাদার সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে মারধর করে। গলা চেপে ধরতেই নিথর হয়ে যান নিতু। সে কথা জানত ছোট ভাই তপু। দেহ তারা বাড়ির বারান্দায় পুঁতে ফেলে। নিতু ছিলেন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়র।
সেই থেকে দুই ভাই পাড়ায় থাকত না। পরিচিত লোকজনকে জানিয়েছিল, বছর ত্রিশের নিতু বিয়ে করে পুণেতে থিতু হয়েছে। ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। পাড়ার লোকজন নিতুর ফোন নম্বর চাইলেও অপু দেয়নি। অপু জানিয়েছিল সে আর তার ভাই কখনও বেঙ্গালুরু, কখনও দিল্লিতে থাকে।
কিন্তু এত দিন পরে কেন খুনের ঘটনা স্বীকার করতে গেল অপু?
পড়শি এবং পুলিশকে অপু জানিয়েছে, দাদাকে খুনের ঘটনায় অপরাধবোধ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল তাকে। গত ছ’বছরে অপু একাধিকবার পাড়ায় এসে নিজেদের বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে গিয়েছে বলেও পাড়া-পড়শিরা জানিয়েছেন পুলিশকে।
অপুদের পড়শি মাণিক বৈদ্য জানান, ২০১৪ সালেই শীল বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মৃত্যু হয়। অপুদের বাবা ফের বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। এক কামরার ছোট্ট ঘরে থাকত তিন ভাই। তিনজনই মেধাবী। সে বছরেই একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পান নিতু। অপু টুকটাক কাজ করছিল। তপু সে সময়ে পড়াশোনা করত। চাকরি পাওয়ার কিছু দিন পর থেকে মদ খেয়ে বাড়িতে আসতে শুরু করেন নিতু। তা নিয়ে গোলমাল বাধত তিন ভাইয়ের।
অপুদের পড়শিরা কেউ কেউ মনে করতে পারছেন, ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বরের দু’তিন দিন আগে তিন ভাইয়ের গোলমাল বাধে। অভিযোগ, নিতু দুই ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। মাণিক বৈদ্য নামে এক পড়শি বলেন, “আমরাই সে দিন দুই ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই। ফের গোলমাল বাধে ১০ ডিসেম্বর রাতে। সকালে উঠে দেখি, বাড়িতে তালা ঝুলছে।’’ তপু তাঁর ছেলেকে পড়াত। ১০ ডিসেম্বরই শেষ পড়াতে গিয়েছিল বলে জানান মাণিক। পাড়ার বাসিন্দা শম্পা বৈদ্য জানান, মাসখানেক আগে ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এসে অপু বাড়ি-ঘর সাফ করে যায়। তবে কেউ রাতে থাকেনি।
মাসখানেক আগে অপু একবার জগদ্দল থানায় হাজির হয়েও বলেছিল, দাদাকে সে খুন করে মাটিতে পুঁতে রেখেছে। সে সময়ে পাড়ায় খোঁজ-খবর করে সন্দেহজনক কিছু মনে না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আর এগোয়নি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy