Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Pranab Mukherjee

প্রণবদার জন্যই সুন্দরবনে বাঁধ তৈরির টাকা পেয়েছিলাম

প্রণব মুখোপাধ্যায়।

প্রণব মুখোপাধ্যায়।

সুভাষ নস্কর (প্রাক্তন সেচমন্ত্রী)
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৯
Share: Save:

আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ ছিল না আমার। প্রথম যখন রাজ্যের মন্ত্রী হই, তার মাস দু’য়েকের মধ্যেই একটা ফোন আসে আমার কাছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ফোন পেয়ে চমকে উঠেছিলাম। তিনি আমায় বলেন, বীরভূমের দেউচা ব্যারেজ থেকে যদি কিছুটা জল ছাড়া যায়, তা হলে বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষিরা খুবই উপকৃত হবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অনুরোধ পেয়েই দফতরের আধিকারিকদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। পড়ে প্রণববাবুর স্ত্রী এ বিষয়ে আমায় ফোন করে ধন্যবাদ জানান। এ ভাবেই ওঁর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রপাত আমার।

মাঝে মধ্যে দু’একবার ফোনে কথা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সে ভাবে গাঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়নি। তবুও ২০০৯ সালে আয়লায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার নদীবাঁধ যখন ক্ষতিগ্রস্ত হল, তখন গোটা সুন্দরবন জুড়ে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা করে প্রণবদার শরণাপন্ন হই। উনি তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। গোটা সুন্দরবন জুড়ে কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করতে গেলে বহু টাকা দরকার। সে কারণে ১৪০০ কিমি ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে যে ৭৭৮ কিমি বাঁধ সম্পূর্ণ ধুয়ে গিয়েছিল, সেই এলাকায় বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি শুনেই প্রণববাবু বলেন, ‘‘অনেক টাকার দরকার ঠিকই, কিন্তু তোমরা একটা প্রজেক্ট বানিয়ে আমায় দাও। আমি দেখছি কী করা যায়।”

প্রণবদার আশ্বাস পেয়ে তৎকালীন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ও দফতরের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনে আয়লা বাঁধ নির্মাণের প্রোজেক্ট তৈরি করা হয়। প্রাথমিক ভাবে ৬০০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে চাওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া, বাঁধ তৈরিতে রাজ্য সরকারও ১০ শতাংশ টাকা দেবে বলে আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রণববাবু বলেন, রাজ্যকে অন্তত ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হবে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে এ বিষয়ে রাজি করিয়ে প্রোজেক্ট নিয়ে আমি দিল্লি যাই। সেই প্রোজেক্ট দেখেই প্রণবদা কেন্দ্রের তরফ থেকে ৫০৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। পরবর্তী আরও দু’টি পর্যায়ে মোট ১৪০০ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসও দেন। তবে শর্ত দেন, তিন বছরের মধ্যেই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ তৈরির জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। সেই টাস্ক ফোর্সে কেন্দ্র ও রাজ্যের বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার, সুন্দরবন বিশারদ তুষার কাঞ্জিলালের মতো মানুষজনকে রেখে সুন্দরবনে কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়।

প্রাথমিক ভাবে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছিল রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। এরপরে কেন্দ্রের টাকা আসতেই শুরু হয় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণের কাজ। প্রণবদার জন্যই সুন্দরবনে কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরির জন্য এত টাকা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।

তবে এখনও একটা যন্ত্রণা অনুভব করি মনে মনে। প্রণবদাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার কারণে। রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণে দল সে বার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে বিরত থাকবে। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন একবার দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়েছিলাম তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। সেখানে গিয়ে প্রণবদাকে আমার এই যন্ত্রণার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি বেমালুম সে সব উড়িয়ে দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করেন। ওঁর মতো মানুষ চিরদিন মনের মণিকোঠায় থাকবেন। যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন প্রণবদা।

—অনুলিখন: প্রসেনজিৎ সাহা

অন্য বিষয়গুলি:

Pranab Mukherjee Subhas Naskar Sunderban
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE