প্রস্ফুটিত: ফুল ধরেছে খলসে গাছে। নিজস্ব চিত্র।
\গত দু’বছর সুন্দরবনে সে ভাবে মধু মেলেনি। তবে এ বার মধু পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী মউলেরা। তাঁরা জানালেন, খলসে গাছে প্রচুর ফুল ধরেছে। সুন্দরবনে এই ফুল থেকেই মূলত মধু সংগ্রহ করে মৌমাছি। বেশি ফুল ফুটলে মধুও ভাল মিলবে, আশা করছেন সকলে।
লকডাউনের জেরে ২০২০ সালে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেয়নি বন দফতর। তবে গত বছর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পর পর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে বহু মৌচাক নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল খলসে ফুলের গাছও। তাই জঙ্গলে গিয়েও কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল মউলেদের।
বন দফতর সূত্রের খবর, গত বছর মাত্র ৩ হাজার কেজি মধু মিলেছিল। অথচ, অন্যান্য বছর ২৫-৩০ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ হয় জঙ্গল থেকে।
গোসাবার সাতজেলিয়ার বাসিন্দা সুদর্শন রায় বলেন, “গত দু’বছর ধরে মধুই পাইনি। সারা বছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকি আমরা। কিছুটা বাড়তি উপার্জন হয়। এ বার ভাল ফুল ধরেছে জঙ্গলে। আশা করি ভাল মধু পাব।’’
মউলেদের পাশাপাশি এ বার মধু সংগ্রহের ব্যাপারে নিয়ে আশাবাদী বনদফতরও। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, ‘‘গত দু’বছর সে ভাবে মধু সংগ্রহ হয়নি। খলসে ফুল না থাকার কারণে গত বছর মউলেরা অনেকেই জঙ্গলে যেতে চাননি। তবে এ বার ইতিমধ্যে খুব ভাল ফুল ফুটেছে জঙ্গলে। ভাল মধু মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।’’
৮ এপ্রিল থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় মধু সংগ্রহ শুরু হচ্ছে বলে বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বন দফতর মউলেদের ৬০টি দলকে জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি দেবে। ইতিমধ্যেই মউলেদের কাছ থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
তবে এ বারও নতুন মউলেদের দলকে মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বন দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, সুন্দরবনের জঙ্গল-লাগোয়া নদী-খাঁড়িতে লাগাতার বাঘের হানায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র অভিজ্ঞ মউলেদেরই জঙ্গলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। জঙ্গলে গিয়ে মউলেদের প্রাণহানি হলে মাথাপিছু এক লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা করেছে বন দফতর।
প্রাথমিক ভাবে ১৫ দিনের জন্য মধু সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে বলে বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রথম ১৫ দিনে সংগৃহীত মধু বন দফতরের কাছে জমা দিয়ে ফের দ্বিতীয় দফায় জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য রওনা দেবেন মউলেরা। বন দফতরের তরফে মউলেদের সংগৃহীত মধু সরকারি দাম কেজি প্রতি ১৮০ টাকায় কিনে নেওয়া হবে। আর সংগৃহীত মোম মউলেরা খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। দামের পাশাপাশি ১ কেজি মধু সংগ্রহের জন্য মউলেদের ২০ টাকা করে দেওয়া হবে। মউলেদের সংগ্রহ করা ওই মধু বন দফতরের থেকে কিনে নেবে ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেস্ট কর্পোরেশন। সেই মধু সংশোধনের পরে প্যাকেজিং করে ‘মৌবন’ নামে বাজারে বিক্রি করবে তারা। ফরেস্ট কর্পোরেশনকে দেওয়ার পরেও মধু বাড়তি থাকলে তা বন দফতরের তরফেই বাইরে বিক্রি করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy