থমকে: ফলকে প্রতিশ্রুতি থাকলেও সংস্কার হয়নি কাঁচা রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা তৈরির ফলক পড়ে আছে। তাতে কী লেখা, বোঝার উপায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, প্রায় দু’মাস হতে চলল এ ভাবেই রাস্তার পাশে পঞ্চায়েতের তরফে ফলক ফেলে রাখা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, রাস্তার কাজের কথা লেখা সেখানে। তবে কাজ কবে শুরু হবে, জানা নেই।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর পঞ্চায়েতের ৩ নম্বর সংসদে পিচের রাস্তা থেকে হাবিবুল্লা শেখের বাড়ি পর্যন্ত কয়েকশো মিটার ইটেররাস্তা বেহাল। সেটি সংস্কার করার দাবি দীর্ঘদিনের। তবে মানুষের আক্ষেপ, এতদিন পরে রাস্তা সংস্কারের জন্য উদ্যোগী হল পঞ্চায়েত, তবে শুধু ফলক ফেলে গেল। কাজের দেখা নেই!
একই অবস্থা এই পঞ্চায়েতের ৮ নম্বর সংসদের বায়লানি চরপাড়ায়। এখানেও একটি মাটির রাস্তার ৫০০ মিটার অংশ ইটের করার জন্য ফলক রেখে যাওয়া হয়েছে রাস্তার পাশে একটি বাড়ির উঠোনে। ফলকে লেখা, ২২ মার্চ নাকি কাজ শুরু হয়েছে। অথচ, কাজের নমুনা চোখে পড়ল না।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কল্পনা সর্দার বলেন, ‘‘ফলক রেখে গিয়েছে প্রায় দু’মাস হতে চলল। এখনও রাস্তার কোনও কাজ হয়নি। কবে হবে জানি না। বর্ষা এসে গেলে আর কাজ করা যাবে বলে মনে হয় না।’’ কল্পনা আরও জানালেন, একই অবস্থা তাঁর সংসদের মালিপাড়ার একটি রাস্তার ক্ষেত্রেও। এ ছাড়া, এই পঞ্চায়েতের ৫ নম্বর সংসদে সর্দারপাড়া থেকে পরিমল সর্দারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৭০০ মিটার মাটির রাস্তা ইটের হওয়ার জন্য ফলক বসেছে দু’মাস আগে। এখনও কোনও কাজই হয়নি।
বিশপুর পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে প্রায় ১০টি ইটের রাস্তা, প্রায় ৩৭টি ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ হবে। কোথাও কোথাও ফলক বসানোর পরে প্রায় দেড়-দু’মাস কেটে গেলেও এখনও কাজ শুরু করা যায়নি। এ ছাড়া, কয়েকটি নালা তৈরির কাজও থমকে।
শুধু বিশপুর পঞ্চায়েত নয় ব্লকের সব পঞ্চায়েতে একই ধরনের সমস্যা চলছে। এই ব্লকের সাহেবখালি পঞ্চায়েতের প্রধান সুচিত্রা মণ্ডল জানালেন, ৯টি ইটের রাস্তা, ৪৫টি পাইলিং ও ৩৬টি ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ থমকে আছে। কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি মণ্ডল জানান, প্রায় ৪৫টি রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে আছে। কারণ, শ্রমিকেরা ৫ মাসের বেশি সময় ধরে মজুরি পাচ্ছেননা। তাই তাঁদের দিয়ে কাজ করানো যাচ্ছে না।
স্থানীয় কালিন্দী নদীবাঁধ বরাবর ৪ নম্বর সামসেরনগর পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার বাঁধে মাটি ফেলা জরুরি। পঞ্চায়েতের পাশ দিয়ে ৪ নম্বর সামসেরনগরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধের অবস্থা ভাল নয়। তবুও কোথাও কাজ করানো যাচ্ছে না। প্রধানের আশঙ্কা, এখন বিভিন্ন বাঁধে মাটির কাজ না হলে বর্ষায় বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে খুব সমস্যা হবে।
একই ধরনের সমস্যা আছে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েতেও। প্রায় ৩৫টি নদীবাঁধে মাটি ফেলার কাজ করানোর পরিকল্পনা থাকলেও সে সব বন্ধ। দুলদুলি পঞ্চায়েতেও এই পরিস্থিতি।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পের শ্রমিকদের ১৫ দিনের মধ্যে টাকা পাওয়ারকথা। কিন্তু ডিসেম্বরের পরে এখনও টাকা আসেনি। বিভিন্ন সংস্থাও দীর্ঘদিন টাকা পায়নি। কেউ কাজ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’
সন্দেশখালি ২ বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায় জানান, কোড়াকাটি, দুর্গামণ্ডপ, সন্দেশখালি, মণিপুর পঞ্চায়েত এলাকায় বাঁধের অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। তবুও মাটির কাজ করানো যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। বাঁধের কাজ না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয় মানুষের মধ্যেও। কিছু রাস্তা তৈরির কাজও থমকে আছে।
সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা ক্ষোভ জানাতে আসছেন। তাঁদের বুঝিয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ হাসনাবাদের বিডিও মুস্তাক আহমেদ জানান, খুব জরুরি কাজ ছাড়া অন্য কাজগুলি ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে করা হচ্ছে। যেহেতু টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছে।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক জানান, বরাদ্দ টাকা আসছে না। ফলে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বরাদ্দ টাকা পেলে সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু টাকা কবে আসবে, তা জানাতে পারছেন না কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy