আনাজ কিনছেন রিজিয়া। ছবি: সামসুল হুদা
বনগাঁর শক্তিগড়ের বাসিন্দা নির্মল শীল থানা-সংলগ্ন রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা সেলুন চালান। পরিবারে তাঁকে ধরে চারজন সদস্য। বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে পড়াশোনা করে। বৃদ্ধের আয়ে কোনও রকমে সংসার চলে। করোনা ও লকডাউনের কারণে কাজকর্ম কয়েক মাস বন্ধ ছিল। মাসখানেক হল সেলুন খুলেছেন। কিন্তু লোকজন কম আসছে। রোজ মেরে কেটে ১০০-১৫০ টাকা আয়।
এ দিকে, জিনিসপত্রের দাম আগুন। বাড়িতে পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কেনা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আগে মাসে ১৫ কেজি আলু লাগত। এখন তা কমিয়ে ১০ কেজি করে দিয়েছেন। অন্যান্য আনাজ কেনাও কার্যত বন্ধ। তাঁর কথায়, ‘‘১০০ টাকার নীচে বাজার হয় না। তাতেও হাতে গোনা কয়েক দিন চলে। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে কী করব বুঝতে পারছি না।’’
হাবড়ার বাসিন্দা পেশায় রাজমিস্ত্রি রমেশের পরিবারে সদস্য চারজন। লকডাউনের জেরে কয়েক মাস রুজি-রোজগার বন্ধ ছিল। এখন রাজমিস্ত্রি বা জোগাড়ের কাজ মেলে মাঝে মধ্যে। মাসে তা-ও মেরেকেটে ১৫ দিন। কাজ পেলে ৪০০ টাকা দিনে আয় হয়। রমেশ বলেন, ‘‘আমাদের মতো মানুষের পক্ষে আনাজ খাওয়া বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি। আগে মাসে ২০ কেজি পেঁয়াজ কিনতাম। এখন কমিয়ে ১০ কেজি করেছি। আলু ৩৫ টাকা কেজি। কয়েক দিন অন্তর আলু কিনছি।’’
হাসনাবাদের হরিপুর গ্রামের চাষি তাপস সরকার নিজের জমিতে এ বার বেগুন ও ঢেঁড়শ চাষ করেছেন। জানালেন, সোমবার হরিপুর হাটে বেগুন ৪০ টাকা কেজি দরে ও ঢেঁড়শ ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে। অথচ ওই বাজারে এ দিন বেগুনের খুচরো দর ছিল কেজি প্রতি ৫৫-৬০ টাকা। ঢেঁড়শ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে। তাপস বলেন, ‘‘বাজারে সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। যা চাষ করি, তা কিনতে হয় না। কিন্তু অন্য আনাজ কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গতকালই ৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ, ৩৭ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি।’’
ভাঙড়ের পূর্ব কাঁঠালিয়ার রিজিয়া বিবির আয় তেলেভাজা বিক্রি করে। মাসে কোনও রকমে ৫-৬ হাজার টাকা রোজগারে ছ’জনের সংসার চলে। মহিলার কথায়, ‘‘আমাদের মতো গরিব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে সব জিনিসের দাম। এভাবে জিনিসের দাম বাড়তে থাকলে বাড়িতে হাঁড়ি চড়বে না।’’ আলু-পেঁয়াজের দাম বাড়ায় মার খাচ্ছে রিজিয়ার ব্যবসাও। আগে ৮-১০ টাকা প্রতি কেজি দরে আলু পাওয়া যেত। এখন তা বেড়ে ৩৫-৪০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজের দাম ৫০-৫৫ টাকা কেজি। রিজিয়ার দোকানে আলুর চপ, পেঁয়াজির দামও বাড়াতে হয়েছে। দু’টাকার চপ এখন তিন টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ১০০ গ্রাম পেঁয়াজির দাম ১২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা। কিন্তু তাতে বিক্রিতে টান পড়েছে বলে জানালেন রিজিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy