ফাইল চিত্র।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলেও লালারস পরীক্ষা করাতে চাইছেন না অনেকেই। উল্টে উপসর্গ নিয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। অনেকে আবার লালারস পরীক্ষার জন্য দিয়েই ঘোরাঘুরি করছেন। এতে সংক্রমণ বাড়ছে। এ বার গাইঘাটা ব্লকে প্রায় প্রত্যেক দিনই স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ শুরু করলেন।
জ্বর, সর্দি-কাশি কারও থাকলে, তাঁকে গৃহনিভৃতবাসে থাকতে বলা হচ্ছে। কেউ যদি করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে থাকেন, তা হলে তাঁদের লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আশাকর্মী এবং এএনএম কর্মীরা ওই কাজ করছেন। বাড়িতে কারও জ্বর, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁদের উপরে নজর রাখছেন। ওষুধপত্র দিচ্ছেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকেরা বাড়িতে গিয়ে রোগী দেখছেন। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বুঝে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি থেকে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেখানে লালারস সংগ্রহ করে তাঁকে ফের অ্যাম্বুল্যান্স করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁরা বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। এই অবস্থায় বাড়ি থেকে না বেরোনোর জন্য নিয়মিত বোঝাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। রিপোর্ট পজ়িটিভ এলেও কোনও অসুবিধা নেই। বাড়িতে রেখেই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাড়িতে থেকেই আক্রান্তেরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।
স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতার জন্য গাইঘাটা ব্লকের মানুষের আতঙ্ক কেটেছে। কোনও ঝক্কি না থাকায় তাঁরা অনায়াসে লালারস পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন। গ্রামবাসী নিজেরাই স্বাস্থ্যকর্মীদের তাঁদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে প্রায় ৪৯০ জন স্বাস্থ্যকর্মী একযোগে করানো মোকাবিলায় কাজ করছেন। ৪০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী রোজ বাড়ি বাড়ি ঢুকে মানুষের স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে রোজ ব্লকের ১৫ জন মানুষের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। ১৫ জনের মধ্যে ১০-১২ জনকে বাড়ি থেকে অ্যাম্বুল্যান্স করে সরকারি হাসপাতালে আমরা নিয়ে আসছি। এ ছাড়া, হাসপাতালের বহির্বিভাগের দেখাতে আসা রোগীদের মধ্যে যাঁদের উপসর্গ থাকছে, তাঁদের লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটায় শুক্রবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮২। এর মধ্যে অ্যাক্টিভ রোগী ২৮ জন। ২৪ জনকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা চলছে। মাত্র ৪ জন কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্রান্ত ৮২ জনের মধ্যে বেশির ভাগই বাড়িতে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়েছেন। ফলে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে এখানকার মানুষ স্বস্তিতে। ব্লকের মানুষের লালারস পরীক্ষা করানো পজ়িটিভ মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য একজন কোভিড নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। চিকিৎসক সায়ন্তন দাস নোডাল অফিসার হিসাবে ব্লকের করোনা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাইঘাটায় ৪টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সেখানে মানুষ বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসেন। সেখানে কারও উপসর্গ দেখা দিলে, তাঁর নাম-ঠিকানা লিখে রাখা হয়। পরে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে তাঁকে বাড়িতে থেকে নিয়ে এসে লালারস সংগ্রহ করা হচ্ছে। ব্লক এলাকায় ৪৬টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। সেখানে প্রসূতিদের শারীরিক পরীক্ষা এবং শিশুদের টিকাকরণের কাজ হয়। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে আসা প্রসূতি এবং শিশুদের মধ্যে কারও করোনার উপসর্গ থাকলে, তাঁদের লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা করছেন ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। সুজন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে ঘুরে খুব ভাল কাজ করছেন। এক আশাকর্মীর হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। হাতে প্লাস্টার করা অবস্থাতেও তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সমীক্ষার কাজ করেছেন।’’
গাইঘাটা ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কেউ না কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এখন উপসর্গ ছাড়াও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে উপসর্গ ছাড়া মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে এসে লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নাইসেডে পাঠানো হচ্ছে। এ কাজে গ্রামের মানুষও এগিয়ে আসছেন। উপসর্গ ছাড়া লালারস দেওয়া এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘গ্রামের মানুষের স্বার্থে স্বাস্থ্য দফতর আমাদের লালারস সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করছেন। আমরাও এগিয়ে এসেছি। না হলে গ্রামে আমাদের অজান্তে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’
গ্রামবাসীর এই সচেতনতায় করোনা মোকাবিলার কাজ অনেকটাই সহজ হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy