চুরমার: ভাঙা হচ্ছে বাড়ি। ছবি: সুমন সাহা
পঞ্চায়েতের অনুমতি না নিয়ে তৈরি হয়েছিল বাড়ি। প্রয়োজনীয় জায়গা ছাড়া হয়নি। মালিকের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন প্রতিবেশী। সম্প্রতি তিনতলা বাড়ির দু’টি তলা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। রবিবার থেকে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে ভাঙার কাজ।
জয়নগরের হরিনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বিবেকানন্দ পল্লির ঘটনা। বাড়ির মালিক গোপালচন্দ্র সর্দার। তাঁর ছেলে সুপ্রিয় জানান, ১৯৯০ সাল থেকে এই জায়গায় আছেন তাঁরা। তখন বাড়িটি একতলা ছিল। ২০০৪ সালে বাড়িটি বাড়ানো নিয়ে প্রতিবেশী আইনজীবী শুকদেব সরকারের সঙ্গে সমস্যা শুরু হয়।
শুকদেব বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরির জন্য অনুমতি তো ছিলই না। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সাড়ে তিন ফুট জায়গা ছেড়ে তবেই নির্মাণ শুরু করতে হবে। সেটাও মানা হয়নি। প্রাথমিক ভাবে নিজেদের মধ্যে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। সেটা না হওয়ায় পঞ্চায়েতকে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাই। তাতেও ফল না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হই।’’
শুকদেব জানান, আদালত পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেয়, নির্দিষ্ট জায়গা না ছেড়ে কাজ হয়ে থাকলে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে। পঞ্চায়েতের দল এসে বিষয়টি দেখেও যায়। কিন্তু অভিযোগ, কাজ বন্ধ হয়নি। এরপরে ২০১১ সালে আবার আদালতে যান শুকদেব। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে আদালত অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে পাল্টা আবেদন করেন গোপাল। হাইকোর্ট, সিঙ্গল বেঞ্চ, সুপ্রিম কোর্ট হয়ে ২০১৭ সালে সেই ভাঙার নির্দেশ বহাল থাকে।
তৎকালীন পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল ওদুদ মোল্লার নেতৃত্বে সাড়ে তিন ফুট জায়গা না ছেড়ে যা নির্মাণ হয়েছিল, তা ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু পুরো নির্মাণ ভাঙার দাবিতে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন শুকদেব। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ফের বাড়িটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় আদালত। পঞ্চায়েতকে দ্রুত নির্দেশ পালন করতে বলা হয়।
কাজ না হওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত অবমাননার কথা বলে এক সপ্তাহের মধ্যে বাড়ি ভাঙার নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি। এরপরেই রবিবার স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু করে পঞ্চায়েত।
হরিনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান প্রবীর সর্দার বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে বাড়িটি ভাঙার নির্দেশ আসে। কিন্তু সঠিক প্রক্রিয়ায় ভাঙার কাজ করতে একটু দেরি হয়ে যায়। এরপরে গত সপ্তাহে আদালত নির্দেশ দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যে ভাঙার কাজ শেষ করতে হবে। সেই মতো আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করেছি।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন জয়নগর থানার আইসি অতনু সাঁতরা এবং জয়নগর ১ বিডিও নৃপেন বিশ্বাস।
সুপ্রিয় বলেন, ‘‘মানছি, বাড়ি তৈরির সময় অনুমতি নেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে আদালতের নির্দেশে যখন ভাঙা হল, তখনই আমরা পঞ্চায়েত যাই। বাড়ির অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু পঞ্চায়েত তা দিতে চায়নি।’’
হাইকোর্টের নির্দেশকে দৃষ্টান্তমূলক বলছেন অনেকেই। স্থানীয় আইনজীবী অসিত নাইয়া বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত তো বটেই, পুরসভা এলাকাতেও অনেক ক্ষেত্রে এ ভাবে নিয়ম না মেনে নির্মাণ হয়। এই রায়ে মানুষ সতর্ক হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy