Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্যরক্ষায় দেশি মুরগি কড়কনাথ

এই কড়কনাথ আসলে দেশজ মুরগি। গুণাবলির পরিচয় পেয়ে এই মুরগি চাষে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০০:১৬
Share: Save:

লাল, নীল বা হলুদ— বর্ণবৈচিত্রের গৌরব তার নেই। বর্ণ তার ঘোর কৃষ্ণ। নাম কড়কনাথ। নিবাস মধ্য ভারত। বৈশিষ্ট্য— তার মাংসে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট প্রচুর। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধে দড়।

এই কড়কনাথ আসলে দেশজ মুরগি। গুণাবলির পরিচয় পেয়ে এই মুরগি চাষে এগিয়ে এসেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। ওই দফতরের ‘কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’-এর অধীনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় কড়কনাথ মুরগির চাষ হচ্ছে। ‘‘কড়কনাথের উপকারিতার কথা মাথায় রেখে আমাদের প্রকল্প এলাকায় বেশি করে এই মুরগির চাষ করব। উৎপাদন বেশি হলে ক্রেতারা সস্তায় কিনতে পারবেন,’’ বলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, মধ্যপ্রদেশ থেকে মুরগির বাচ্চা এনে চাষ শুরু করা হয়েছে। হরিণঘাটা, পুরুলিয়ার অযোধ্যা এবং বর্ধমানে কড়কনাথ মুরগির চাষ চলছে।

বছরখানেক আগে নামখানায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকে কড়কনাথ প্রজাতির মুরগি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাণিসম্পদ দফতরের জেলা আধিকারিকের কাছে তিনি জানতে চান, ‘‘জানেন, এখানে কোথায় কড়কনাথ মুরগি চাষ হচ্ছে?’’ আধিকারিক আমতা আমতা করতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘খোঁজ নিন। আমি শুনেছি, এই কড়কনাথ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই ওই জেলার সুন্দরবন, কাকদ্বীপ, নামখানা এবং কুলপিতে কড়কনাথ মুরগির চাষ শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ঝাবুয়া জেলায় প্রচুর পরিমাণে এই মুরগির চাষ হয়। চিন, ইন্দোনেশিয়াতেও এই প্রজাতির মুরগি মেলে। নেদারল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্রে এই ধরনের মুরগির হাইব্রিড বা সংকর প্রজনন চলছে।

কড়কনাথ মুরগির পালক, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে মাংসের রং— সবই কালো। এমনকি তার রক্তের রং কালচে লাল। ডিমগুলোও কালো। প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুদ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কালো মাংসের জন্য মধ্যপ্রদেশে ঝাবুয়া জেলার স্থানীয় বাসিন্দারা একে কালামাসি বলে থাকেন।’’

সাধারণ পোল্ট্রি বা দেশি মুরগির তুলনায় কড়কনাথের দাম বেশি। ‘‘কড়কনাথ মুরগির মাংসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট থাকে। যা মানুষের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম,’’ বলছেন প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুনীতকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, কড়কনাথ মুরগির মাংসে ফ্যাট এক শতাংশেরও কম। প্রোটিন রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ। কোলেস্টেরলের মাত্রাও সাধারণ মুরগির তুলনায় অনেক কম। এই মুরগির মাংস ও ডিমে আয়রনের পরিমাণ বেশি। ফলে ডায়াবিটিস রোগী ছাড়াও মহিলাদের বিভিন্ন রোগে এই মাংস ও ডিম খুব উপকারী। কড়কনাথের মাংস ও ডিমের প্রভূত উপকারিতার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডকে পরামর্শ দিয়েছে, ক্রিকেটারদের এই মুরগির মাংস খাওয়ানো হোক। ক্রিকেটারদের খাদ্য-তালিকায় এই মাংস ইতিমধ্যেই ঠাঁই করে নিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy