Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আর্সেনিক আক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে

কমিটির  রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘এখন ব্লকের সব জায়গায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। মানুষ পানীয় জলের সঙ্গে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক যুক্ত জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন।’’

আর্সেনিক-আক্রান্ত: গাইঘাটার গ্রামে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

আর্সেনিক-আক্রান্ত: গাইঘাটার গ্রামে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

আর্সেনিক আক্রান্তদের মৃত্যু মিছিল অব্যাহত গাইঘাটা ব্লকে। আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত গাইঘাটায় মারা গিয়েছেন এক মহিলা-সহ ৬ জন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন ৭০ জন মানুষ। এঁদের মধ্যে অনেকেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিন গুনছেন।

কেন গাইঘাটা ব্লকে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না? কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস বলেন, ‘‘এখন ব্লকের সব জায়গায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। মানুষ পানীয় জলের সঙ্গে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক যুক্ত জল খেতে বাধ্য হচ্ছেন।’’ অশোক বলেন, ‘‘সরকারি স্তরে অসুস্থদের উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ নেই। বেশির ভাগেরই চিকিৎসা চালানোর মতো ক্ষমতা নেই। তা ছাড়া আর্সেনিক আক্রান্তদের নিয়মিত প্রোটিন ও ভিটামিন খাওয়া দরকার। কিন্তু আক্রান্তরা তা পাচ্ছেন না।’’

এই বক্তব্য মেনে নিয়ে অবশ্য নারাজ প্রশাসন। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জানানো হয়েছে, পানীয় জলে আর্সেনিক সমস্যা মেটাতে গাইঘাটা ব্লকে ৭১টি আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ বসানো হয়েছে। আক্রান্তদের ত্রাণও দেওয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই গাইঘাটা ব্লককে ‘আর্সেনিকমুক্ত ব্লক’ হিসাবে ঘোষণা করা হবে। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মধ্যক্ষ ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘আর্সেনিক সমস্যা নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। এলাকায় ৪০৩টি গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে। আক্রান্তদের সব রকমের সাহায্য করা হচ্ছে।’’

গাইঘাটা ব্লকের বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘সপ্তাহে এক দিন করে পঞ্চায়েতগুলোতে আর্সেনিক বিষে আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু আক্রান্তরা কোনও পরিষেবাই পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। তাঁরা জানান, চিকিৎসা ও ওষুধ মিলছে না। পাওয়া যাচ্ছে না পুষ্টিকর খাবারও। তাই হয়তো মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।

গত মার্চ মাসে গাইঘাটার বিষ্ণুপুর এলাকায় মারা গিয়েছিলেন এক দম্পতি-সহ তিনজন। মৃতদের নাম, বলরাম দাস, বিমলা দাস এবং বিশ্বনাথ দাস। জুলাই মাসে মারা যান গোষ্ঠ দাস। সম্প্রতি মারা গিয়েছেন আরও দু’জন। ১৭ ডিসেম্বর তেঘরিয়ার গাজনা এলাকার বাসিন্দা মনতোষ বিশ্বাস বাড়িতেই মারা যান। তিনি চাষবাস করতেন। সামান্য চাষের জমি আছে গাজনা গ্রামে। কয়েক বছর আগে বিষ্ণুপুর গ্রামে আর্সেনিক রোগ নির্ণয় শিবিরে দেখাতে গিয়ে প্রথম জানতে পারেন, তিনি আর্সেনিকে আক্রান্ত। আর্সেনিক সংক্রামণ থেকে গায়ে ছোপ ছোপ দাগ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। চিকিৎসা চলছিল। শেষে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। তাঁর পরিবারের লোকজন জানান, প্রথমে বাড়ির টিউবওয়েলের জল খেতেন। তা থেকেই শরীরে আর্সেনিকের বিষ ঢুকেছিল। শেষদিকে অবশ্য মধুসূদনকাটি গ্রামের প্ল্যান্ট থেকে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল কিনে এনে খাচ্ছিলেন।

১১ অক্টোবর বিষ্ণুপুর মাঠপাড়ার বাসিন্দা পুঁটিরাম দাসের মৃত্যু হয় বাড়িতেই। চাষের কাজ করতেন। দীর্ঘদিন ধরে গায়ে, হাতে কালো কালো ছোপ ও দাগ ছিল। কিছুদিন আগে থেকে জ্বর, কাশিতে ভুগতে শুরু করেন। ঠাকুরনগরে চাঁদপাড়া ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে দেখিয়েছিলেন। আত্মীয় স্বজনেরা জানিয়েছেন, পুঁটিরাম প্রথমে বাড়ির টিউবওয়েলের জল খেতেন। তা থেকেই এই

মারণ রোগ।

পরপর মৃত্যুর ঘটনায়, আর্সেনিক দূষণের জেরে অসুস্থ অন্য রোগীরা আতঙ্কে ভুগছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকার যদি আমাদের চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা না করে, তা হলে আমরা যাই কোথায়!’’

আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির তরফে আক্রান্তদের নিয়ে মার্চ মাসে গাইঘাটা ব্লক প্রশাসনের চিকিৎসা, বিশুদ্ধ আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। বহু অসুস্থ মানুষ সে দিন হাজির ছিলেন। অশোক বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল ও আক্রান্তদের চিকিৎসার দাবি করা হয়েছিল। তারপরও পরিস্থিতির খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। ব্লক প্রশাসনের তরফে ১২ কেজি করে চাল দেওয়া হত অসুস্থদের। এখন চালও নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না।’’

মার্চ মাসে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার পর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে বিষ্ণুপুর এলাকায় আর্সেনিকে আক্রান্তদের খোঁজে সমীক্ষা করা হয়। তাঁরা কী জল ব্যবহার করেন, কী খাবার খান, ওষুধপত্র খাচ্ছেন কিনা— সে সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় বিষ্ণুপুর এলাকায় ৭৫ জন আর্সেনিকে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তাঁদের চিকিৎসার জন্য আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে শিবির করা হয়েছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Arsenic Gaighata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy