Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

বিমান সংস্থায় চাকরির নাম করে প্রতারণা 

১৮ জুলাই থানায় অভিযোগ হলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বিহারের যুবক রোশনকে। তবে তদম্তে জানা গিয়েছে, পাইলটের পোশাক পরা যে ছবি রোশন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করেছিল, তা আদৌ তার নিজের নয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১০
Share: Save:

বিমানচালকের পোশাকে যুবকের ছবি দেখে তরুণী ধরে নিয়েছিলেন, তিনি সেখানকার কর্মী। ওই যুবক দাবি করে, যে সংস্থায় পাইলটের কাজ করে সে, সেখানকার উপরমহলের সঙ্গে তার খাতির ভালই। চাকরি পাইয়ে দিতে পারে। সেই আশায় শ্যামনগরের এক তরুণী রোশন প্রতাপ সিংহ নামে ওই যুবককে ৬০ হাজার টাকা দেন।

কিন্তু কাজ এগোয়নি। এক সময়ে যোগাযোগ বন্ধ করে রোশন। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে শেষমেশ জগদ্দল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কবিতা রাউত নামের ওই তরুণী। কবিতার বাবা একটি প্রসাধনীর দোকান চালান। অন্যের কাছ থেকে ধার করে মেয়ের চাকরির আশায় রোশনকে টাকা দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৮ জুলাই থানায় অভিযোগ হলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বিহারের যুবক রোশনকে। তবে তদম্তে জানা গিয়েছে, পাইলটের পোশাক পরা যে ছবি রোশন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করেছিল, তা আদৌ তার নিজের নয়। অন্য এক পাইলটের ছবি ব্যবহার করেছিল সে। অভিযুক্ত যুবকের আসল নাম রোশন কিনা, তা নিয়েও ধন্দে পুলিশ। তদন্ত চলছে।

শ্যামনগরের ঠাকুর রোডে বাড়ি কবিতার। তিনি জানান, বিমানসেবিকা হবেন বলে উচ্চমাধ্যমিকের পরে একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রশিক্ষণ নেন। গত এক বছরে কয়েকটি সংস্থায় ইন্টারভিউ দেয়েছেন। কবিতার কথায়, ‘‘এ ধরনের চাকরির খোঁজ পাওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কয়েকটি গ্রুপে আমি ছিলাম। সেখানেই এক তরুণীর সঙ্গে আমার আলাপ হয়।’’ কবিতা জানান, ওই তরুণী তাঁকে রোশনের ফোন নম্বর দেন। রোশন জানান, তিনি একটি নামজাদা সংস্থার বিমানের পাইলট। নিজের ছবি পাঠান। আশ্বাস দেন, সংস্থার মানবসম্পদ উন্নয়ন আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন।

গত দু’তিন মাস ধরে কবিতা এবং তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলে রোশন। সে বলে, চাকরি করে দেওয়ার জন্য তাকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। তার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা জমা থাকবে ওই বিমান সংস্থার কাছে। প্রশিক্ষণ শেষ হলে সেই টাকা কবিতা ফেরত পেয়ে যাবেন।

১৭ জুলাই ছিল ওই বিমান সংস্থায় ইন্টারভিউ ছিল। তার আগে ৬০ হাজার টাকা তাকে মিটিয়ে দিতে হবে বলে জানায় রোশন। নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও দেয় সে। ৮ জুলাই ওই অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন কবিতা। কথা ছিল, তার চার দিন পরে কবিতা দমদম বিমান বন্দরে ওই সংস্থার অফিস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়ে যাবেন। তারপর থেকেই না বাহানায় সময় পিছিয়ে দিতে থাকে রোশন। এক সময়ে জানায়, ১৭ জুলাই সে নিজেই কলকাতায় আসবে। রাজারহাটের যে হোটেলে ইন্টারভিউ হবে, সেই হোটেলে ৩০৩ নম্বর ঘরে উঠবে। সে দিন সকালে সে নিজেই কাগজপত্র কবিতার হাতে দেবে।

কবিতা জানান, নির্ধারিত দিনে হোটেলে গিয়ে রোশনের খোঁজ পাননি তিনি। রোশনের মোবাইলও বন্ধ ছিল। পরে রিং বেজে গেলেও সে কবিতার ফোন ধরেনি বলে দাবি ওই তরুণীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে তরুণী রোশনের নম্বর দিয়েছিল, তার প্রোফাইলও উধাও হয়ে যায়।

পুরো ঘটনাটি কবিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গ্রুপে জানান। এক যুবক জানান, রোশন নামে যার ছবি রয়েছে, সেটি তাঁর। তিনি একটি বিমান সংস্থার পাইলট। তাঁর এই ছবি দিয়ে আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর কানে এসেছিল বলে দাবি করেন ওই যুবক।

ফোনে রোশনকে অবশ্য ধরা গেল। প্রথমে সে ‘রং নম্বর’ বলে ফোন কেটে দেয়। পরে জানায়, যে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে বলা হচ্ছে, সেই অ্যাকাউন্ট সে চার মাস আগে বন্ধ করে দিয়েছে। তার আরও দাবি, সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। যদি তার অ্যাকাউন্টে টাকা এসে থাকে, তা হলে সেই টাকা সে ফেরত দেবে।

কিন্তু আপনি কি বিমান চালক?

প্রশ্ন শুনে লাইন কেটে যায় রোশনের।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Forgery Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy