জলের ধাক্কায় ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বাঁধ। ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতে। ছবি: দিলীপ নস্কর
অমাবস্যার কটালের জোয়ারে কাকদ্বীপ মহকুমার চারটি ব্লকে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী ও সমুদ্র বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নোনা জল ঢোকায় নষ্ট হয়েছে ঘরবাড়ি, কৃষি জমি ও মাছের পুকুর। সমস্যায় পড়েছেন এলাকার মানুষ। কিন্তু ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলি এখনও মেরামত শুরু হল না। ফলে চিন্তায় বাসিন্দারা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকায় বেশির ভাগ জায়গা আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা এখনও ঠিক হয়নি। তার মধ্যে ভরা কটালে বাঁধ ভাঙায় সব শেষ হয়ে গিয়েছে বহু মানুষের।
সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও কাকদ্বীপ নদী ও সমুদ্র ঘেরা এই চার ব্লকে কটালের জোয়ারে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়। তার জেরেই নোনা জলে ডুবে গিয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে বহু পানীয় জলের নলকূপ। নোনা জলে ডুবে থাকা পুকুরের মাছ মরে ভাসতে শুরু করেছে। আনাজের খেত, পানের বরজ ও আবর্জনার স্তূপ জলে ডুবে রয়েছে। সব মিলিয়ে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। নোনা জলে বাড়ি ডুবে থাকায় বাড়ি ভাঙতে শুরু করেছে। জল নামলেও মানুষ বাড়ি ঢুকতে পারছেন না। নদী বাঁধের উপরে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন দূরে কোনও প্রতিবেশীর বাড়িতে। সকলের একটাই দাবি, ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলি দ্রুত মেরামত করা হোক। কারণ, সামনেই পূর্ণিমার কটাল। আগে বাঁধ মেরামত না হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।
সাগর ব্লকের ধসপাড়া সুমতিনগর পঞ্চায়েতে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কটালের জোয়ারের নোনা জলে পানীয় জলের নলকূপ ডুবে গিয়ে অকেজো হয়ে পড়ছে। পুকুরের জলে মরা মাছ ভাসছে। ফলে পানীয় জল পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের দ্বীপের বাসিন্দা অরুণ প্রামাণিক বলেন, ‘‘এই দ্বীপে মুড়িগঙ্গা নদী বাঁধ প্রায় ৩ কিলোমিটার ভেঙে গিয়েছে। কৃষিজমি ও নদী সমান হয়ে রয়েছে। জল নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এখনও বাঁধ মেরামত শুরু না হওয়ায় সকলেই চিন্তার মধ্যে রয়েছি।”
ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিপিন পড়ুয়া জানান, এই এলাকায় প্রায় ১৮-২০টি নলকূপ অকেজো হয়ে গিয়েছে। পানীয় জল সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারা পাইপ লাইনের সাহায্যে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। এলাকায় দূষণ কমাতে ইতিমধ্যে ব্লিচিং ও চুন ছড়ানো হচ্ছে।
নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতে এলাকার বাসিন্দা তথা নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শুভেন্দু মান্না বলেন, “মুড়িগঙ্গা নদী বাঁধ প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। জল নামতে শুরু করায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৯০টি কাঁচা মাটির বাড়ি ক্ষতি হয়েছে। ৫টি পানীয় জলের নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ছে। প্লাবিত এলাকার বাসিন্দা দু’টি স্কুলে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। তাঁরা এখন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। নদী বাঁধের অবস্থার ছবি তুলে ব্লক প্রশাসন ও সেচ দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
পাথরপ্রতিমা ব্লকের জি প্লট পঞ্চায়েত এলাকায় গোবর্ধনপুর গ্রামে প্লাবিত এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করলেও কৃষিজমি ও মাছের পুকুর, যায়াতের রাস্তাঘাট নোনা জলে ডুবে রয়েছে। সারা এলাকায় পচা দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। ওই এলাকার রনজিৎ সাউয়ের অভিযোগ, সমুদ্র বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা তো অনেক দূরের কথা। প্রশাসনের কারও দেখা নেই। সামনের কটালে আগে বাঁধ তৈরি না হলে আরও ক্ষতি হবে।
বাঁধ মেরামতের বিষয়ে কাকদ্বীপ মহকুমা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার কল্যাণ দে বলেন, “দ্রুত টেন্ডার ডেকে সামনের বৃহস্পতিবার থেকে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy