বেড়িগোপালপুর সেতুর একপাশে রয়েছে কচুরিপানা। —নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি থেমেছে আগেই। অথচ, এখনও গাইঘাটার জমা জল নামেনি। নাব্যতা হারিয়ে ইছামতী ও যমুনা মৃতপ্রায় হয়ে যাওয়ায় জমা জল ওই দুই নদী দিয়ে নামতে পারছে না বলে অভিযোগ দুর্গতদের। স্থায়ী পরিত্রাণ হিসাবে দুই নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি তুলেছেন তাঁরা। সে কথা রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক মনমীত নন্দা গাইঘাটা র আংড়াইল এলাকায় স্পিডবোটে ইছামতীর অবস্থা পরিদর্শন করেন। জেলাশাসক জানান, ইছামতীর জল ধীরে ধীরে নামছে। ওই জল না নামলে যমুনার জলও নামবে না। তিনি বলেন, ‘‘বেড়িগোপালপুর এলাকায় ইছামতীর উপর একটি সেতুর একপাশে কচুরিপানা আটকে রয়েছে। ফলে, সেখান জলের স্বাভাবিক গতি বাঁধা পাচ্ছে। ওই কচুরিপানা সরানোর জন্য সেচ দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
সেচ দফতরের বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সোমেন মিশ্র জানান, শীঘ্রই ওই এলাকায় নদী থেকে কচুরিপানা সরানো শুরু হবে। এ বার বৃষ্টির সঙ্গে দুই নদী উপচে খাল-বিল-বাওর দিয়ে ঢুকে গাইঘাটার রামনগর, সুটিয়া, ঝাউডাঙা-সহ অন্তত ৮টি পঞ্চায়েত এলাকা প্লাবিত করে। ইছামতী ভাসিয়েছে বনগাঁ শহরেরও কিছু এলাকাকে। অথচ, গাইঘাটার নিকাশি ব্যবস্থা ওই দুই নদীই।
পশ্চিমবঙ্গ ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ার মাজদিয়া থেকে বসিরহাটের হাসনাবাদ পর্যন্ত ইছামতী প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। মাজদিয়ায় নদীর উৎসমুখ থেকে স্থানীয় ফতেপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে উনিশ কিলোমিটার এলাকায় নদী সম্পূর্ণ মজে গিয়েছে।
অন্যদিকে, গাইঘাটায় যমুনা রয়েছে প্রায় বারো কিলোমিটার। ধর্মপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকা থেকে শুরু করে নদী শেষ হয়েছে ইছাপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখান দিয়ে যমুনা ঢুকেছে গোবরডাঙায়।
২০০০ সালের বন্যার পর দু’বার ইছামতী সংস্কার হয়। কিন্তু নোনা জলের সঙ্গে পলি এসে ফের নদীর গভীরতা কমিয়ে দিয়েছে। বছরভর দু’টি নদীই কচুরিপানায় ঢেকে থাকে। আর বর্ষার সময়ে নদীর জল উপচে লোকালয় ভাসায়। তবে, এ বারের মতো পরিস্থিতি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেখা যায়নি। ত্রাণ শিবির ছেড়ে বানভাসি মানুষেরা কবে ঘরে ফিরতে পারবেন, তার উত্তরও কারও জানা নেই। আগামী বছরগলিতে যাতে ফের একই দুর্ভোগের শিকার হতে না হয়, সেই কারণে তাঁরা দুই নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি তুলেছেন।
ইছামতী নদী সংস্কার সহায়তা কমিটির সম্পাদক সুভাষ চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, স্বরূপনগরের টিপি থেকে স্থানীয় তারাগুনিয়া পর্যন্ত ইছামতীর বাইশ কিলোমিটার পথে পলি তুলতে পারলে গাইঘাটা-সহ বনগাঁ মহকুমার জমা জল দ্রুত নেমে যাবে। নদীর উৎসমুখে সাড়ে উনিশ কিলোমিটার এলাকাতেও সংস্কার প্রয়োজন। ঝাউডাঙা এলাকার বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ দাসকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ইছামতীর জলেও কোনও টান নেই। জল নামবে কী ভাবে? ছোটবেলায় দেখেছি, বৃষ্টিতে জল জমলেও দু’তিন দিনের মধ্যেই নেমে যেত। কবে বাড়ি ফিরতে পারব জানি না।’’ একই সুরে যমুনা পাড়ের বাসিন্দা কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘ছেলেবেলায় দেখেছি, নদী ছিল খরস্রোতা। ২০০০ সালের বন্যার পর থেকেই নদীর নাবত্য কমতে থাকে। এখন নদী তলানিতে ঠেকেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy