Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আস্তানা-মাছ উড়িয়ে নিয়ে গেল ঝড়

সেই শুঁটকির বেশিরভাগ রফতানি হয় বাংলাদেশ এবং অসমে। কিন্তু শনিবার রাতের বুলবুল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে তাঁদের আস্তানা, শুকিয়ে রাখা মাছ এমনকি ঘটি-বাটিও। কেউ কেউ টাকাকড়ি বাঁচাতে পেরেছেন। অনকের তাও গিয়েছে।

ধ্বংস: মৎস্যজীবীদের ক্ষতিগ্রস্ত আস্তানা। নিজস্ব চিত্র

ধ্বংস: মৎস্যজীবীদের ক্ষতিগ্রস্ত আস্তানা। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রকাশ মণ্ডল 
বকখালি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

কার্তিক থেকে মাঘ। সম্বৎসরের সিংহভাগ রোজগার হয় এই চার মাসে। নদী-সাগরের চরই এই চার মাস তাঁদের ঘরবাড়ি। সমুদ্রের মাছ কিনে তা শুকিয়ে বিক্রি করাই তাঁদের পেশা। কেউ কাজ করেন ট্রলার মালিকের কাছে, অনেকে ছোট ছোট দল তৈরি করে চার মাস ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। কিন্তু শনিবারের রাতই তাঁদের সবকিছু কেড়ে নিয়ে গিয়েছে। গিয়েছে আশ্রয়, গিয়েছে সঞ্চয়। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা ঠিক কোথা থেকে শুরু করবেন ভেবে পাচ্ছেন না পাঁচ হাজার মানুষ।

সেই শুঁটকির বেশিরভাগ রফতানি হয় বাংলাদেশ এবং অসমে। কিন্তু শনিবার রাতের বুলবুল উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে তাঁদের আস্তানা, শুকিয়ে রাখা মাছ এমনকি ঘটি-বাটিও। কেউ কেউ টাকাকড়ি বাঁচাতে পেরেছেন। অনকের তাও গিয়েছে। আপাতত ত্রাণই তাঁদের ভরসা। কিন্তু নতুন করে কাজ শুরু করে কারবার করতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তাঁরা।

কাকদ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, নামখানার অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হল মাছ। অন্তত আড়াই হাজার ট্রলার সমুদ্রে যায় মাছ ধরতে। বেশিরভাগ মাছই বাজারে বিক্রি হয়। আবার অনেক মাছের বাজার তেমন ভাল নয়। কিন্তু শুঁটকি হিসেবে সেই মাছের চাহিদা বিপুল। সস্তায় সেই মাছ কিনে বালির চরায় শুকিয়ে মজুত করেন তাঁরা।

কাকদ্বীপের গোপাল সর্দার তাঁদেরই এক জন। পুজোর পরেই দলবল নিয়ে পাড়ি দেন কালিস্তানে। সমুদ্রের খাঁড়ির পাশে আদিগন্ত চর সেখানে। সেখানেই হোগলা পাতা দিয়ে ছোট ছোট আস্তানা তৈরি করেন তাঁরা। প্রথম ক’দিন যায় পরিকাঠামো তৈরি করতে। গোপাল জানান, বাড়ি ছেড়ে এসে হাজার খানেক মানুষ চার মাস ধরে এখানেই পড়ে থাকেন। নিজেরাই রান্না করেন।

এ ছাড়াও কাকদ্বীপেরই লালগঞ্জ এবং ফ্রেজারগঞ্জেও আস্তানা গাড়েন অন্তত চার হাজার মানুষ। সুভাষ সর্দার জানান, ভোর থেকে শুরু হয় তাঁদের কাজ। ট্রলার থেকে আসা মাছ কিনে নেন তাঁরা। সেই মাছ পরিষ্কার করে চরে শুকোতে দেওয়া হয়। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে তা মজুত করে রাখা হয়। পরে তা ব্যবসায়ীদের কাছে বেচে দেন সেই শুঁটকি।

অনেকেই ১০-১২ জলের দল তৈরি করে নিজেদের পুঁজি লাগিয়ে ব্যবসায় নামেন। সঙ্গে প্রয়োজনমতো শ্রমিক নেন। আবার নেপাল পাত্র, রবি কর্মকারেরা ১৫০-২০০ জন শ্রমিক নিয়োগ করে ব্যবসা করেন। জানুয়ারি থেকে আসতে শুরু করেন বাইরের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মাধ্যমেই বাইরে চালান হয় শুঁটকি।

গোপাল-সুভাষেরা জানান, ভাল লাভ হয় বলেই বছরের পর বছর এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। মাস খানেক আগে থেকে এ বার কারবার শুরু হয়েছিল তাঁদের। শুরু দিকেই মাছ বেশি শুকনো করা হয়। ভগবান সর্দার জানান, প্রচুর শুকনো মাছ মজুত করা ছিল। নতুন করেও প্রচুর মাছ কেনা হয়েছিল।

ভগবান বলেন, ‘‘ঝড়ের সতর্কতা জারি হওয়ার পরে শুকনো মাছ বড় বড় পুঁটলিতে বেঁধে বাঁশের খুঁটিতে আটকে রেখেছিলাম। শনিবার বিকেল থেকে আমরা সবাই এক জায়গায় বসেছিলাম। কিন্তু রাত আটটা নাগাদ যে ঝড় এল, তেমন ঝড় কখনও দেখিনি। আস্তানা থেকে শুরু করে যা ছিল সব উড়িয়ে নিয়ে গেল ঝড়। একটা জায়গায় আমরা কোনওমতে হাত ধরাধরি করে নিজেদের রক্ষা করি।’’

ভগবান বলছেন, ‘‘রাতভর তুমুল বৃষ্টি চলে। ভোর হতে দেখি, চরের উপরে কিছু জাল আর ভাঙা ছাউনি পড়ে রয়েছে। কী করে যে ঘুরে দাঁড়াব, জানি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Bulbul Fishermen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy