ইলিশ: এই মাপের মাছই ধরা পড়ছে জালে। নামখানার ঘাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নামখানা ঘাটের পাশেই লেখা রয়েছে ‘ছোট ইলিশ ধরবেন না।’ এরপরেও জালে উঠছে ছোট ইলিশ। ফলে বড় ইলিশ আর পাতে পড়ছে না ভোজনরসিক বাঙালির।
সাউথ সুন্দরবন ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিস ওয়াকার্স ইউনিয়নের অফিস। অফিসের দেওয়ালের উপরে ঝোলানো রয়েছে রাজ্যের মৎস্য দফতরের একটি ফ্লেক্স। ওই ফ্লেক্সেই ছোট ইলিশ না ধরার জন্য বলা হয়েছে। অথচ তার পাশের ঘাটেই ঢুকছে ছোট ইলিশ ভর্তি ট্রলার।
মৎস্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ এলাকায় সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমা ৪ ব্লক মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি ট্রলার গভীর সমুদ্রে যায়। নিয়ম অনুযায়ী ট্রলারের মৎস্যজীবীদের ৯০ এমএম সেন্টিমিটার ফাঁকের জাল ব্যবহার করতে হয়। এর নীচে অর্থাৎ ছোট ফুটো জাল হলে তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এমনকী সরকারি নিয়মের ওই জালে ৩০০ গ্রাম ও তার বেশি ওজনের মাছ ধরা পড়বে। মাছের দৈর্ঘ্য হবে মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটার।
কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গভীর সমুদ্রে ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে ৫০ গ্রাম থেকে দেড়শো, দু’শো, আড়াইশো গ্রাম ওজনের মাছ পর্যন্ত ধরা হচ্ছে।
ছোট ইলিশ ধরার মাছ বন্দরে ফিরে সেখান থেকেই গাড়িতে করে চলে যাচ্ছে পাইকারি মাছ বাজারে। ওই ওজনের মাছ বিকোচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কিলো দরে। কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক সৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গত বছর পর্যন্ত নামখানা, কাকদ্বীপ, সাগর ও পাথরপ্রতিমা এলাকার বিভিন্ন বন্দর থেকে মাছ তুলে যে সমস্ত ম্যাটাডর ডায়মন্ড হারবারে পাইকারি বাজারে আসত। সেগুলি তল্লাশি করত পুলিশ। ছোট মাছ দেখলেই গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হত। মাটিতে পুঁতে নষ্ট করা হত ওই মাছ।
এ বার সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছোট ইলিশই আসছে ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজারে। সেখান থেকে পাইকারি বিক্রেতারা ওই মাছ কিনে বিভিন্ন শহরতলিতে নিয়ে যাচ্ছেন।
মৎস্যজীবী দুলাল দাস, রতন দাসের জানালেন, ভরা ইলিশের মরসুম চলছে। অথচ পুবালি হাওয়া ও ঝির ঝিরে বৃষ্টির অভাবে মাছ গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলের দিকে আসছে না। ফলে তাঁদের জালে বড় মাছ ধরা পড়ছে না। অথচ একটি ট্রলার গভীর সমুদ্রে যেতে গেলে দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়।
মৎস্যজীবীরা জানান, এখনও পর্যন্ত মাছ ধরতে যাওয়া মাত্র ৬ থেকে ৭ ট্রিপ হয়েছে। প্রথম দিকে প্রতি টিপে ১০ থেকে ১৫ কিলো করে মাছ উঠেছে। এ বার লাভের মুখ দেখতেই পাননি তাঁরা। এ দিকে ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। শোধ করতে গিয়ে নাজেহাল মৎস্যজীবীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘এ বারের সমুদ্রে মাছ না থাকায় এখন যাঁরা সমুদ্রে যাচ্ছেন। তাঁরা ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করছেন। আর তাতেই ধরা পড়ছে একেবারে ৫০ গ্রাম থেকে ২০০ থেকে আড়াইশো গ্রাম ওজনের ইলিশ। ওই ইলিশ পাইকারি বাজারে লুকিয়ে পাঠাতে হচ্ছে। ট্রে-র মধ্যে অন্য মাছ সাজিয়ে তার নীচে রাখা হচ্ছে ছোট ইলিশ। ফলে পুলিশ ধরতে পারছে না।’’ তবে ছোট ইলিশ ধরা হচ্ছে মেনে নিয়েছেন মৎস্যজীবী বিভিন্ন ইউনিয়নের সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানালেন কিছু ট্রলার মালিক ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে এই অন্যায় কাজ করছেন।
এটা কোনও মতে মেনে নেওয়া যায় না। আরও আইন কড়াকড়ি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সমস্ত বিষয়ে কাকদ্বীপের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাকে জানানো হয়েছিল।
ডায়মন্ড হারবারের সহ মৎস্য অধিকর্তা জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘আমি পাইকারি মাছ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা দেখছি।’’
সুন্দরবন জেলার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, ‘‘মৎস্য দফতরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy