Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Death

বাঘের মুখ থেকে ফিরল বাসুদেবের প্রাণহীন দেহ  

সুন্দরবন কোস্টাল থানার অন্তর্গত কুমিরমারি গ্রাম থেকে রবিবার প্রতিবেশী দুই সঙ্গীর সঙ্গে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলার মুখে পড়েছিলেন বাসুদেব।

শোকার্ত: (ইনসেটে) বাসুদেবের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: (ইনসেটে) বাসুদেবের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা 
গোসাবা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৭:৫৭
Share: Save:

সংসার চালাতে নদীতে, জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরাই একমাত্র পথ। আর সেই মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে রবিবার বাঘের হামলায় মৃত্যু হল বাসুদেব মণ্ডল (৬২) নামে আরও এক মৎস্যজীবীর।

সুন্দরবন কোস্টাল থানার অন্তর্গত কুমিরমারি গ্রাম থেকে রবিবার প্রতিবেশী দুই সঙ্গীর সঙ্গে কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হামলার মুখে পড়েছিলেন বাসুদেব। ঘটনাটি ঘটে সুন্দরবনের ঝিলা ২ নম্বর জঙ্গলের দুয়ালা খালের কাছে। অনেক কষ্ট করে বাঘের মুখ থেকে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে এলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দেহ গ্রামে ফিরতেই সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন বাসুদেবের পরিবার।

বাড়িতে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার বাসুদেবের। ছোট থেকেই সুন্দরবনের নদী, খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরে বড় হয়েছেন। এলাকায় অন্য কোনও কাজকর্ম না থাকায় এই পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। এই পেশায় বিপদের ঝুঁকি আছে জেনেও সংসার চালানোর খরচ জোগাড় করতে বিকল্প পথ খুঁজে পাননি তিনি। তাই সমস্ত বিপদ উপেক্ষা করেই অন্য দিনের মতো রবিবারও পাড়ি দিয়েছিলেন ঝিলা ২ নম্বর জঙ্গলে। সঙ্গী নিতাই গায়েন ও রোহিণী গায়েনকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন দুয়ালা খালের পাড়ে নেমে কাঁকড়া ধরছিলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকাই একটি বাঘ জঙ্গলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে বাসুদেবের ঘাড়ে থাবা বসিয়ে তাঁকে টানতে টানতে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। আচমকা বাঘের মুখে সঙ্গীকে ঝুলতে দেখে হতচকিত হয়ে যান বাকি দু’জন। সেই মুহূর্তে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে সঙ্গীকে ছাড়িয়ে আনার সাহস তারা কেউই দেখাতে পারেননি। অগত্যা তড়িঘড়ি রোহিণীকে নৌকায় বসিয়ে দ্রুত দাঁড় বেয়ে গ্রামে ফেরেন নিতাই। গ্রামে গিয়ে বলেন ঘটনার কথা। নিতাইয়ের মুখে এই কথা শুনে গ্রাম থেকে দু’টো নৌকায় জনা পনেরো গ্রামবাসী রওনা দেন দুয়ালা খালের দিকে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পটকা ফাটানোর পাশাপাশি থালা, টিন পিটিয়ে বিকট শব্দ করতে করতে লাঠি নিয়ে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করেন সকলে। একসঙ্গে এতো মানুষ জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করায় বাসুদেবের দেহ ছেড়ে দিয়ে গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যায় বাঘটি। জঙ্গলের মধ্যে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় বাসুদেবের দেহ উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। দেহ নিয়ে আসা হয় কুমিরমারি বাগনা পাড়া গ্রামে। সেখানে দেহ এসে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন। রবিবার রাতেই দেহ সৎকার করেন পরিবারের লোকজন। একচালা খড়ের ঘরের বারান্দায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী গীতা। তিনি বলেন, “বারে বারে জঙ্গলে যেতে নিষেধ করেছি, শোনেননি। আসলে সংসারের খরচ জোগাড় করতেই জঙ্গলে কাঁকড়া ধরতে যেতেন।”

স্থানীয় বাসিন্দা অঙ্কন মণ্ডল বলেন, “মাস দেড়েক আগেও আমাদের গ্রামের আরেক বাসিন্দা দুর্গাপদ মণ্ডল একই ভাবে বাঘের আক্রমণে মারা গিয়েছিলেন। আসলে বিকল্প জীবিকা না থাকায় এখানকার মানুষ এই নদী, জঙ্গলের উপরেই নির্ভরশীল। তাই বিপদ আছে জেনেও বাধ্য হয়েই জঙ্গলে পাড়ি দেন তাঁরা।’’ কুমিরমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “বন দফতরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে কী ভাবে এই সব মানুষের জঙ্গল নির্ভরতা কমিয়ে তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে।’’ তবে বাসুদেব ও তাঁর সঙ্গী মৎস্যজীবীরা বন দফতরের অনুমতি ছাড়াই জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সহ ক্ষেত্র অধিকর্তা অনিন্দ্য গুহঠাকুরতা।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Royal Bengal Tiger Gosaba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy