আমাকে নাও...। —নিজস্ব চিত্র।
সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে মেয়েকে ফিরে পেলেন বাবা।
এমনিতে তরুণ সমাজের মধ্যে সোস্যাল মিডিয়ার কুপ্রভাব নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। কিন্তু ফেসবুক-টুইটারের মতো সোস্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ার পথে তা কোনও মতেই অন্তরায় নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে সোস্যাল মিডিয়া যে কত মানুষের পক্ষে আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে, তার প্রমাণ রেখে গেল শহর কলকাতা থেকে অনেক দূরে ক্যানিঙের গ্রাম।
কী ভাবে?
২৬ জুন ক্যানিংয়ের সঞ্জয়পল্লির কাছে রেললাইনের ধার বরাবর হাঁটার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান কুলতলি থানার মেরিগঞ্জের সুফিয়া মোল্লা। কোলে থাকা বছর চারেকের শিশু রুনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর জখম হয়। সে সময়ে অবশ্য মা-মেয়ের পরিচয় জানা যায়নি। ওসি সতীনাথ চট্টোরাজ ও সভাপতি পরেশ রাম দাস নিজেরা উদ্যোগী হয়ে জখম শিশুটিকে প্রথমে ক্যানিং হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে তাকে বাঙ্গুরে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেই থেকেই শিশুটির যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন ওসি ও সভাপতি। শিশুটির দেখভালের জন্য রাখা হয় দু’জন সিভিক ভলেন্টিয়ার ও দু’জন আয়া। শিশুটির পরিবারকে খুঁজে পেতে ওসি ও সভাপতি বেছে নেন সোস্যাল মিডিয়াকে। মেয়েটির ছবি দেওয়া হয় ফেসবুকে। ভিলেজ পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের শিশুটির ছবি-সহ গ্রামে গ্রামে প্রচারে নামতে বলা হয়।
ক্যানিং থানার তরফ থেকে শিশুটিকে দেখভাল করার জন্য দু’জন সিভিক ভলেন্টিয়ার ও দুজন নার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। শিশুটির আদরযত্নের কোনও ত্রুটি ছিল না। তবুও ছোট্ট চোখ দু’টি প্রতিনিয়ত খুঁজে চলত তার বাবা-মাকে।
এ ভাবেই খবর পৌঁছয় ক্যানিঙের হেড়োভাঙার পাশের গ্রাম মেরিগঞ্জের মোল্লা পরিবারের কাছে। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা মিজানুর মোল্লা ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
মিজানুর মোল্লা বলেন, ‘‘সাংসারিক কারণে স্ত্রীর সঙ্গে একটা ঝামেলা হয়েছিল। তারপরেই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন স্ত্রী। আমরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করছিলাম। কিন্তু এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।’’ মিজানুর জানান, হঠাৎই তাঁর এক পরিচিত হেড়োভাঙা বাজারে ঘটনার কথা শোনেন। ফেসবুকে মেয়ের ছবিও দেখান তাঁকে। তারপরেই ক্যানিং থানায় ছুটে আসেন মিজানুর। শিশুটিকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে সতীনাথবাবু ও পরেশবাবুও রীতিমতো খুশি। বললেন, ‘‘মেয়েটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। ও এ বার পরিবারের কাছে ফিরে যাবে, এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে!’’
কেমন ছিল বাবা-মেয়ের মিলন-দৃশ্য? রবিবার হাসপাতালে মেয়ের বেডের কাছে গিয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাকেন মিজানুর। হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরে পেয়ে ‘বাবা বাবা’ বলে তাঁর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে রুনা। মেয়েকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা। বার বার চুমু খেতে থাকেন।
হাসপাতালের নার্স, রোগীরাও চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy