দ্রুত-হাতে: কাজ চলছে বাঁধ সারানোর। ছবি: সমরেশ মণ্ডল
গত বছর ইয়াসে দুই জেলার উপকূলবর্তী এলাকার বহু বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল গ্রাম। তার আগে আমপানেও বাঁধ ভেঙে জল ঢুকেছিল অনেক এলাকায়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উপকূল এলাকায় ফের ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ঝড়ের পূর্বাভাষে দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় দুর্বল বাঁধ নিয়ে আতঙ্কিত মানুষজন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ১, ২, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বহু জায়গায় বাঁধ বেহাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত এই সব বাঁধের সংস্কার প্রয়োজন। কুমিরমারির বাসিন্দা সন্তোষ সর্দার বলেন, “আমপান-ইয়াসে বাড়িতে জল ঢুকেছিল। আবার ঝড় আসছে। ফের বাঁধ ভেঙে বানভাসি হতে হয় কি না, সেটাই চিন্তার।”
হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি পঞ্চায়েতের ভান্ডারখালি আদিবাসীপাড়ার পাশের স্লুস গেটের কাছে প্রায় ১০০ ফুট নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। ভান্ডারখালি বটতলার কাছে প্রায় ১৫০ ফুট গৌড়েশ্বর নদী বাঁধ বেহাল। একই অবস্থা স্বরূপকাঠি লঞ্চ ঘাটের কাছে কেদারচক স্লুস গেট থেকে মনসা বাড়ি পর্যন্ত ১৫০ ফুট বাঁধের। ছোট সাহেবখালি পুরাতন ফেরিঘাটের কাছেও জরাজীর্ণ নদীবাঁধ। কেদারচক ফেরিঘাট থেকে সুকুমার মণ্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৯০০ ফুট বাঁধও জরাজীর্ণ। দুলদুলির প্রধান চঞ্চল মণ্ডল বলেন, “বাঁধের দ্রুত সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে।” রূপমারি পঞ্চায়েতের বারুনিমেলা খেয়াঘাটের কাছে ১৫০ ফুট নদীবাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। কুমিরমারি খেয়াঘাটের কাছেও প্রায় ১৫০ ফুট বাঁধের সংস্কার প্রয়োজন। বিশপুর পঞ্চায়েতের বায়লানি খেয়াঘাটের কাছে কিছু জায়গায় বাঁধের উপরের ঢালাই রাস্তা ধসে গিয়েছে। সান্ডেলেরবিল পঞ্চায়েতের ১ ও ৩ নম্বর আমবেড়িয়া গ্রামে ও ১১ নম্বর সান্ডেলেরবিল গ্রামের নদীবাঁধও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সন্দেশখালি ২ ব্লকের মণিপুর পঞ্চায়েতের গোয়ালিয়ার ঘাটের কাছে প্রায় দেড় কিলোমিটার রায়মঙ্গল নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের ৯ নম্বর স্লুস গেট থেকে কাটাখালি শিবমন্দির পর্যন্ত ৩০০ মিটার ছোট কলাগাছি নদীবাঁধও বেহাল। ঢোলখালিতে প্রায় ২০০ মিটার ডাসা নদীর বাঁধ জরাজীর্ণ। টংতলা, বউঠাকুরানি, ৩ ও ৫ নম্বর স্লুস গেট, দ্বারিকজঙ্গল এলাকাতেও নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ।
কোরাকাটি পঞ্চায়েতের তুসখালি থেকে পশ্চিম তুসখালি আদিবাসী স্কুল পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নদীবাঁধ বেহাল। তুসখালিতে রজনী প্রামাণিকের বাড়ি থেকে কেওড়াপাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার নদীবাঁধ বেহাল। সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েতের বানতলা, পাটনিপাড়া, কাছারিপাড়া, মাহাতোপাড়া এলাকায় বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। ন্যাজাট ২ পঞ্চায়েত জুড়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার বাঁধ জরাজীর্ণ। এ ছাড়া, শেয়ারা রাধানগর পঞ্চায়েতের ঢোলখালিতে ৩ কিলোমিটার ডাসা নদীর বাঁধ দুর্বল। হাটগাছা, কালীনগর পঞ্চায়েত এলাকাতেও কয়েক কিলোমিটার নদীবাঁধের সংস্কার প্রয়োজন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানদের অনেকেই জানান, বেহাল বাঁধ সংস্কারের জন্য সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। সেচ দফতরের বসিরহাট ডিভিশনের আধিকারিক সুপ্রতিম রায় বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে কাজ হচ্ছে। আরও বেশ কিছু জায়গায় পরিদর্শন করে দ্রুত কাজ করা হবে।”
আয়লা-আমপানে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বহু বাঁধ কার্যত তছনছ হয়ে যায়। বিপর্যয়ের পরে প্রশাসনের তরফে বাঁধের সংস্কার হলেও এখনও অনেক বাঁধই বেহাল বলে জানান বাসিন্দারা। আসন্ন দুর্যোগের আগে তাই আতঙ্কিত এলাকার মানুষ। স্থানীয় সূত্রের খবর, সাগর ব্লকের মহিষামারি, ধবলাট, কচুবেড়িয়া, বঙ্কিমনগর, রাসপুরে বাঁধ বেহাল। ঘোড়ামারা ও মৌসুনি দ্বীপেও অনেক বাঁধের অবস্থা বিপজ্জনক। কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ বলতে কিছুই নেই। পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর, কে-প্লট-সহ একাধিক এলাকায় বাঁধ মেরামত হয়নি বলে অভিযোগ।
সাগরের ধসপাড়া সুমতিনগর ২ পঞ্চায়েতের বঙ্কিমনগরের প্রায় এক কিলোমিটার নদীবাঁধ গত বছর ইয়াসে বেহাল হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতি হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এলাকার বাসিন্দা সরস্বতী জানা বলেন, “আমরা অনেক বার আবেদন করেছি। স্থানীয় বাঁধের জন্য বিক্ষোভও দেখিয়েছি। কিন্তু কে কার কথা শোনে! বিরোধিতা করলে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়।”
মহিষামারি এলাকায় গত পূর্ণিমার কটালেই এলাকায় জল ঢোকে। সেই জায়গায় এখনও বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়নি বলে দাবি এলাকার মানুষের।
সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “দুর্বল বাঁধগুলি দ্রুত মেরামতির কাজ চলছে। পুরো সুন্দরবন এলাকায় ১৩০টি জায়গার জন্য টেন্ডার ডেকে কাজ চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy