Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

ওঝা-গুণিনে ভরসা, প্রাণ গেল শিশুর

হাসপাতালে এসে নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন পরিবারের সদস্যেরা।

দেহে তখন প্রাণ নেই পল্লবীর। নিজস্ব চিত্র

দেহে তখন প্রাণ নেই পল্লবীর। নিজস্ব চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯ ০৫:১৫
Share: Save:

ওঝা-গুনিনের উপরে ভরসা রেখে প্রাণ গেল এক শিশুকন্যার।

পুলিশ জানায়, বছর পাঁচেকের শিশুটির নাম পল্লবী সর্দার। সন্দেশখালির মণিপুর গ্রামে তার বাড়ি। বৃহস্পতিবার রাতে কালাচ সাপে ছোবল মেরেছিল তাকে। পরিবারের লোকজন সরকারি হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে যান গুনিনের কাছে। দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখে ঝাড়ফুঁক চলে। কাজ না হওয়ায় শুক্রবার সকালে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আনা হয় তাকে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন মেয়েটিকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার জন্যই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

বাবা নেই পল্লবীর। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের খাবার খেয়ে মায়ের সঙ্গে মাটির ঘরের মেঝেয় ঘুমিয়েছিল সে। রাত দেড়টা নাগদ পায়ে সাপে কামড় দেয়।

মেয়ের চিৎকারে মা শ্রাবন্তী উঠে দেখেন, একটি কালাচ সাপ বিছানার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। পল্লবীকে নিয়ে সকলে ছোটেন স্থানীয় এক গুনিনের কাছে। সেখানে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক ধরে কেরামতি চলে গুনিনের। কাজ হয়নি কিছুই। বাড়ির লোকজন পল্লবীকে ফিরিয়ে এনে স্থানীয় একটি ঠাকুরের থানে আরও দু’আড়াই ঘণ্টা রেখে দেন।

অবশেষে শুক্রবার বেলা ১০টা নাগাদ একরত্তি মেয়েকে নিয়ে তাঁরা পৌঁছন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, বেশ কিছুক্ষণ আগেই মৃত্যু হয়েছে পল্লবীর।

সাপের কামড়ের পরে তড়িঘড়ি হাসপাতালে আনা হলে মেয়েটির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হত বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে চিকিৎসক সমর রায় বলেন, ‘‘সাপে কামড়ালে সরাসরি সরকারি হাসপাতালে রোগীকে আনার জন্য বিভিন্ন ভাবে প্রচার চলছে। কিন্তু এখনও সকলে যে সচেতন হননি, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।’’

হাসপাতালে এসে নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন পরিবারের সদস্যেরা। পল্লবীর কাকা রাজীব বলেন, ‘‘বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছে। ওঝা-গুনিনের কাছে না নিয়ে গিয়ে সরাসরি হাসপাতালেই আসা উচিত ছিল। তা হলে হয় তো বেঁচে যেত মেয়েটা।’’

ওঝা-গুনিনের উপরে ভরসা করে বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বারুইপুরের সুভাষগ্রাম পেটুয়াপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল। গত রবিবার কাজ সেরে মেঠোপথ ধরে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকেও সাপে ছোবল মারে। পরিবারের লোকজন সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে তাঁকে গুনিনের কাছে নিয়ে যান। সেখানে দু’দিন তুকতাক করার পরেও রোগী সুস্থ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আনা হয়। পরে পাঠানো হয় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন বছর কুড়ির ওই যুবক।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Shaman ওঝা Sandeshkhali Snake Bite
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy