Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘সম্পত্তি হাতাতে’ দিদিকে মার, ত্রাতা পড়শিরা

নিমতা থানা এলাকার ওলাইচণ্ডীতলার সাউথ উদয়পুরের এলাকাবাসী যৌথ ভাবে পুলিশে অভিযোগ করার পরে শনিবার পুলিশ এসে অভিযুক্ত বোনকে সতর্ক করে গিয়েছেন।

অভিযোগ এ ভাবেই বোনের হাতে প্রায়ই নিগৃহীত হতেন শিখাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগ এ ভাবেই বোনের হাতে প্রায়ই নিগৃহীত হতেন শিখাদেবী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে ভেসে আসত বৃদ্ধার চিৎকার। স্থানীয়েরা প্রতিবাদও করতেন। অভিযোগ, তবুও বড় দিদিকে নিয়মিত নির্মম ভাবে মারতে পিছপা হতেন না তাঁর ছোট বোন।

নিমতা থানা এলাকার ওলাইচণ্ডীতলার সাউথ উদয়পুরের এলাকাবাসী যৌথ ভাবে পুলিশে অভিযোগ করার পরে শনিবার পুলিশ এসে অভিযুক্ত বোনকে সতর্ক করে গিয়েছেন।

ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দুই বোনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা এটি। কিন্তু তা বলে কাউকে তো এমন ভাবে কেউ মারতে পারেন না! এলাকার লোকেদের অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাউথ উদয়পুরের বাড়িতে মাকে নিয়ে থাকতেন অবিবাহিত শিখা সরকার। বছর দুই আগে মা মারা যাওয়ার পরে একাই থাকতেন ৭০ বছরের ওই বৃদ্ধা। স্থানীয়েরা জানান, মৃত্যুর আগে শিখাদেবীর মা সব সম্পত্তি অবিবাহিত মেয়েকে লিখে দেন। তবে মায়ের মৃত্যুর পরে নিমতার বাড়িতে এসে ওঠেন স্বামী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে শিখাদেবীর বোন রীতা সাহা।

অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই প্রতিবেশীরা শুনতেন শিখাদেবী কান্নাকাটি করছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা অরবিন্দ সরকার বলেন, ‘‘দুই বোনের মাঝে ঢুকতাম না। শুনতাম, সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য শিখাপিসির উপরে তাঁর বোনেরা অত্যাচার করেন।’’ তিনি জানান, স্থানীয় ক্লাব থেকে কয়েক জন গিয়ে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। তখন রীতাদেবীর মেয়ে এবং বউমা অন্য কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। এমনকী শিখাদেবীকে মারধরের প্রমাণও দাবি করেন তাঁরা।

স্থানীয়েরা জানান, এর পরেই তাঁরা প্রমাণ জোগাড় শুরু করেন। শিখাদেবীর চিৎকার শুনলেই আশপাশের বাড়ি থেকে লুকিয়ে তা মোবাইলে বন্দি করা হত। কয়েক দিন আগে সকালে শিখাদেবীকে লাথি মেরে তাঁর গলায় পা তুলে দিতে দেখা যায় রীতাদেবীকে। সে সব মোবাইলে তোলা হয়। এর পরে স্থানীয় বাসিন্দারা সকলে স্বাক্ষর করে নিমতা থানায় লিখিত অভিযোগ জানান।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মায়ের মৃত্যুর পর থেকে চুপ হয়ে গিয়েছিলেন শিখাদেবী। এ দিন ওই বাড়িতে গেলে রীতাদেবীর জামাই মন্টু করণ বলেন, ‘‘ওঁর মাথায় গোলমাল আছে। ঘরেই প্রস্রাব করেন। কত পরিষ্কার করা যায়! তাই হয়ত মেরেছেন।’’

কিন্তু এক জন মানুষকে এমন ভাবে মারা যায়? উত্তর নেই রীতাদেবীদের কাছে। তবে এলাকার মানুষ আর অত্যাচার হতে দেবেন না শিখাদেবীর উপরে। আর শিখাদেবী বলছেন, ‘‘নিজের বোনই রোজ মারে। এর থেকে দুঃখের কিছু হয় না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE