Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

ফোনে মগ্ন, বাড়ছে পথ দুর্ঘটনা

মোবাইল ফোনে নিয়ে গাড়ি চালানো বা কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার জন্যই বেশির ভাগ দুঘটনা ঘটছে বলে দাবি জনসাধারণের। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে যে কারণে ঘটে গিয়েছে এত বড় দুর্ঘটনা। বাস উল্টে প্রাণ গিয়েছে ৪৪ জনের। কিন্তু হুঁশ নেই চালক, পথচলতি মানুষের।

বিপজ্জনক: পথেঘাটে হামেশাই দেখা মিলবে এই দৃশ্যের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

বিপজ্জনক: পথেঘাটে হামেশাই দেখা মিলবে এই দৃশ্যের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

দৃশ্য ১: ইচ্ছামতী সেতু: কানে মোবাইল। রাস্তা পার হচ্ছেন যুবক। সামনেই একটি গাড়ি চলে এল। ব্রেক কষলেন চালক। ঠিক সময়ে ব্রেক না কষতে পারলে বড় বিপদ ঘটতে পারত।

দৃশ্য ২: ভ্যাবলা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা: এক তরুণী কানে হেডফোন নিয়ে গান শুনতে শুনতে রেল লাইনের গা ঘেঁষে যাচ্ছিলেন। পিছন দিয়ে ট্রেন আসছে। কোনও হুঁশ নেই। পাশ থেকে এক প্রবীণ তাঁকে টেনে সরিয়ে নিলেন।

দৃশ্য ৩: ওল্ড সাতক্ষীরা রোড: অটো চালক এক হাতে ফোন ধরে কথা বলতেই বলতে ছ’জন যাত্রী নিয়ে অটো চালাচ্ছেন। এমন ভাবে বাস চালাতেও দেখা যায় কিছু চালককে।

মোবাইল ফোনে নিয়ে গাড়ি চালানো বা কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার জন্যই বেশির ভাগ দুঘটনা ঘটছে বলে দাবি জনসাধারণের। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে যে কারণে ঘটে গিয়েছে এত বড় দুর্ঘটনা। বাস উল্টে প্রাণ গিয়েছে ৪৪ জনের। কিন্তু হুঁশ নেই চালক, পথচলতি মানুষের। প্রশাসনও তেমন ভাবে পদক্ষেপ করে না বলে অভিযোগ। পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন বসিরহাট মহকুমায় গাড়ি নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোর জন্য পাঁচশোরও বেশি মামলা হয়েছে। লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বসিরহাট মহকুমা পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, এ বার কড়া পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন থানার পুলিশ কানে মোবাইল দিয়ে গাড়ি চালানোর অপরাধে ১৫ জনকে আটক করে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। রিকশা, সাইকেল আরোহী কিংবা পথ চলতে চলতে মোবাইল কানে দেওয়ার অপরাধে অন্তত ৫০ জনকে সাবধান করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ট্র্যাফিক আইন মেনে গাড়ি চালানোর জন্য মানুষকে সচেতন করা হয়েছে বার বার। তা সত্ত্বেও যাঁরা আইন ভেঙে কানে মোবাইল নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

ভুবন মণ্ডল নামে এক বাস চালকের কথায়, ‘‘দুর্ঘটনা হলে আমাদের দোষ দেওয়া হয়। আগুন লাগানো, গাড়ি ভাঙচুর, মারধর— কিছুই বাদ যায় না। অথচ যাঁরা মোবাইল কানে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হয় না।’’

এক পুলিশ কর্তার দাবি, মোটরবাইক, লরি, বাস-সহ অন্য গাড়ি মোটর ভেহিকলস আইনের মধ্যে পড়লেও সাইকেল কিংবা রিকশা চালকদের ক্ষেত্রে কোনও আইন নেই। তাই রাস্তায় যত্রতত্র বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা যে ভাবে মোবাইল কানে কথা বলতে বলতে বড় রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালায়, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। নিজে দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। তাদের জন্য অন্য লোকেরও জীবন সংশয় হতে পারে।

বসিরহাট আদালতের আইনজীবী অমিত মজুমদার বলেন, ‘‘মোবাইল কানে গাড়ি চালাতে গিয়ে ধরা পড়লে মোটর ভেহিকলস আইন অনুযায়ী জামিনযোগ্য অপরাধ। ওই ব্যক্তির ১০০-৬০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। ৩ বছর জেলও হতে পারে।’’ পড়ুয়াদের এ বিষয়ে বেশি করে সচেতন করতে হবে বলে মনে করেন বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক যোগেশচন্দ্র ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রীরাই বেশির ভাগ রাস্তাঘাটে ফোনে কথা বলে। এ বিষয়ে তাঁদের সচেতন হওয়া উচিত।’’ তবে বাড়ির লোককেও ছেলেমেয়েদের সচেতন করতে হবে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষক।

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Mobile Phones Road Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy